
উপকূলীয় জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চর কুকরি মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে আছে।
এই তিনটি ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামের প্রায় ২৩ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রামে লিপ্ত। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, কৃষি ও মৎস্য শিকার এখানকার প্রধান পেশা। দুর্যোগ মৌসুমে নদী উত্তাল থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পরে। ঢালচরে কোনো সাইক্লোন শেল্টার না থাকলেও চর কুকরি মুকরি ও মুজিবনগরে একটি করে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। নেই গবাদিপশুর জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা।
ঢালচরের বাসিন্দারা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায়ই তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, ফসলের জমি তলিয়ে যায়। চর কুকরি মুকরিতে নদীভাঙন নিয়মিত ঘটনা। বসতভিটা হারিয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বহু পরিবার জরাজীর্ণ ঘরে বাস করে, যা সামান্য ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেও ভেঙে যেতে পারে। দুর্গম চরাঞ্চলে দুর্যোগপূর্ব সতর্কতা অনেক সময় পৌঁছায় না, ফলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে।
তবে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তারা নিজেরাই উঁচু ঘর তৈরি করছে অথবা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে বসবাস করছে। কিছু যুবক দুর্যোগের আগে ও পরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে।
ঢালচরের বাসিন্দা কামাল জানান, বংশ পরম্পরায় তারা এখানে বাস করছেন। প্রতি বছর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে তাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। দুর্যোগ শুরু হলে নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে মূল ভূখণ্ডে আসা যাওয়া করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাইক্লোন শেল্টার ও গবাদিপশুর জন্য কেল্লা না থাকায় চরম বিপদে পড়তে হয়।
চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের বাসিন্দা আঃ রহিম জানান, কৃষিকাজ করে তার সংসার চলে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জোয়ারের পানিতে তার গবাদিপশু ভেসে যায় এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। প্রতিবার তিনি নতুন করে ঘর তৈরি করেন। এভাবেই তার জীবন চলছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, চর কুকরি মুকরি, ঢালচর ও মুজিবনগর ইউনিয়ন ভৌগোলিকভাবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি বছর দুর্যোগ মৌসুমে এখানকার মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর