
হবিগঞ্জ: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে পশুর হাট বসানো নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন কর্তৃক একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা জারির পরও হাট বসানোয় বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়, ৩১ মে (শুক্রবার) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাট বসানো হয়। এ সময় দায়িত্ব পালনকালে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে তর্কবিতর্ক ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে बिना ইজারায় বাজার বসানো নিয়ে গত ছয় মাস ধরে প্রশাসন ও বাজার কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে পশুর হাট বসানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়া হয়।
গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে প্রতি শনিবার বিশাল পশুর হাট বসে। হাটে ২০-২৫ হাজার গরু ওঠে এবং প্রায় ৮-১০ হাজার গরু বিক্রি হয়। প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে এই হাট বসে। বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, হাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন, যাদের প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া নেতা-কর্মীদের চা-নাস্তার জন্য ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
একটি সূত্র জানায়, জনতার বাজারে প্রতি হাটে ‘প্রত্যয়ন ফি’র নামে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোট ১৮ বার এই পশুর হাট বসেছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান গত ৭ জানুয়ারি জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণের নির্দেশ দেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী পশুর হাটটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সারাদেশে মহাসড়কের পাশে পশুর হাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনতার বাজার এলাকায় যান এবং হাট না বসানোর কঠোর নির্দেশনা দেন। কিন্তু হাট কমিটি তাদের অবস্থানে অনড় থাকে।
শনিবার (৩১ মে) সকাল ১০টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা জনতার বাজার এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জনতার বাজারের প্রবেশপথগুলোতে গরুবোঝাই ট্রাক আটকে দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার একটি গরুবোঝাই পিকআপ ভ্যান আটকালে বাজার কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তাকে মারতে উদ্যত হন।
এদিকে, বাজার কমিটি বলছে, গত বছর ৯১ লাখ টাকা কালেকশন করে সরকারি ফান্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কালেকশনের টাকা স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়ার পর অতিরিক্ত টাকা স্থানীয় মসজিদের ফান্ডে জমা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার জানুয়ারি থেকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারিভাবে কোনো কালেকশন করেননি। বর্তমান বাজার কমিটি কালেকশন করে তাদের মতো ব্যয় করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাটটি নিয়ে একটি পরিষ্কার নির্দেশনা আসা দরকার।
এ ব্যাপারে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ জানান, হাইকোর্টের রুল নিশি জারির পরে তারা বাজার পরিচালনা করছেন। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিস খাস কালেকশন করত। তিনি দাবি করেন, বাজারে কোনো গণ্ডগোল হয়নি এবং এটি সাজানো মামলা।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান জানান, অবৈধ গরুর হাটে প্রশাসনের সাথে খারাপ ব্যবহারের জন্য ৩৮ জনের নামে মামলা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, হাট বসানোর কারণে বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৮ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত কয়েক মাসে জোরপূর্বক বাজার বসিয়ে কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে গত জানুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক যখন নিষেধাঙ্গা দেন তখন থেকেই খাস কালেকশন করা হচ্ছে না। এরপরও কেউ যদি রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে থাকে, তা আইনগতভাবে দ-নীয় অপরাধ।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর