
পদত্যাগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) বরিশাল জেলার মুখ্য
সংগঠকসহ তিন নেতা। নিজ দলকে নীতিবিচ্যুত আখ্যা দিয়ে রোববার রাত ৮টায় বরিশাল
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক
হওয়ায় বৈছাআ গণবিরোধী প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে বলে জানান তারা। বরিশাল জেলা ও
মহানগরের অধিকাংশ নেতা নানান অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া ৫০ ভাগ
নেতাকর্মী বৈছাআর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান তারা।
বিভিন্ন প্রকৌশল দপ্তরে গিয়ে ঠিকাদারি কাজ পেতে বৈছাআ নেতারা তদবির করছে বলে
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এছাড়া জেলা মুখ্য সংগঠক হাসিবুর আলম তুরানের নাম
ব্যবহার করে বৈছাআ নেতা মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে
বলে অভিযোগ করেন।
তবে এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বৈছাআ নেতা মহসিনসহ জেলার আহ্বায়ক
সাব্বির। পদত্যাগ করা নেতারা হলেন, বৈছাআ বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল
ইসলাম তুরান, যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আবিদ ও সদস্য তাহাসিন আহমেদ রাতুল।
সংবাদ সম্মেলনে তুরান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার শক্তিতে রূপান্তর
করে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশপন্থি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু
পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে এসে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ
প্লাটফর্মকে অনেকে বিতর্কিত করেছে অনেকে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার (তুরান) পরিচয়ে বৈছাআর জেলা
শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা
ঘটিয়েছে। কথিত কিছু নেতাকর্মী দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রমজীবী মানুষের কাছে
না গিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও আমলাদের দপ্তরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার
চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা দেশের মানুষকে সচেতন না করে পুরোনো রাজনৈতিক ধারায়
আগ্রাসী, দখলবাজি, সাম্প্রদায়িক উসকানি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা
বাণিজ্য করে চলছে।
এ সময় তুরান আরও বলেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য পরিষ্কার না করে উদ্দেশ্যহীন
রাজনৈতিক মদ তৈরি করে রাখা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক
অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই নারীদের স্বাধীনতা রক্ষায় এদের কোনো ভূমিকা
লক্ষ্য করিনি।
সাংগঠনিক, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত এবং সচেতনতা তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এরা
(বৈছাআ নেতাকর্মী) নিজেদের মধ্যেই কোন্দল সৃষ্টি করে চলছে। আমদের ব্যক্তিগত
মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের
অন্তর্ভুক্তমূলক অংশগ্রহণ থাকবে এবং বাংলাদেশপন্থি রাজনৈতিক ধারার চর্চা হবে।
কিন্তু বৈছাআ সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ না করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে;
যা জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পুরোপুরি
সাংঘর্ষিক। এ কারণে সংগঠনটি একটি গণবিরোধী প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে।
তাই জুলাই শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি না করে পদত্যাগ করাকে যৌক্তিক
মনে করেছি। অতীতে একাধিকবার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও তা বৈছাআ গ্রহণ করেনি। বরং
আমার (তুরান) সামনেই পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। যার প্রমাণ আমার কাছে
রয়েছে। তাই সংবাদ সম্মেলন করে আজ থেকে বৈছাআর সকল পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা
দিয়েছি।
বৈছাআর জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন বলেন, মুখ্য সংগঠক তুরান
নয়, স্থানীয় কর্মী তুরানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান থেকে আমরা
কৌশল হিসেবে ছদ্মনাম ব্যবহার করছি। পুলিশ কমিশনার ঘটনার তদন্ত করেছেন। তাতে
চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত
করতে এ মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
বৈছাআ বরিশাল জেলা আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ
ভিত্তিহীন। আমরা এখন পর্যন্ত কেউ তদবির করিনি, যদি কেউ গোপনে করে থাকে তবে তা
ভিন্নকথা। তারা পদত্যাগ করবে তা আমাকে অবগত করেনি।
সংগঠনে অনিয়ম থাকলে তারা প্রতিবাদ করতে পারতো; কিন্তু তা তারা করেননি। এখন
সংগঠন তাদের ভালো লাগছে না। তাই সাধারণ অভিযোগ দিয়ে এখন দল থেকে বের হয়েছে।
তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানান তিনি।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর