
নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ‘জনতার বাজার’ পশুরহাট আবারও জমে উঠেছে। জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শনিবার ২১তম পশুর হাট বসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে ৪ থেকে ৫ হাজার গরু উঠেছে, যার মধ্যে কয়েক হাজার বিক্রিও হয়েছে। তবে কতগুলো গরু বিক্রি হয়েছে, তার সঠিক হিসাব বাজার কমিটির কাছে নেই।
অভিযোগ রয়েছে, বাজার পরিচালনা কমিটি ‘প্রত্যয়ন’ নামের রশিদের মাধ্যমে প্রতিটি পশু বিক্রেতার কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। প্রতি হাটে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা হচ্ছে, গত চার মাসে ২০টির বেশি হাট বসায় কোটি টাকার বেশি আদায় হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজার পরিচালনা কমিটির একজন নেতা জানান, ৫৭ সদস্যের কমিটিতে বিএনপি, জামাত, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের লোকজন থাকলেও মাত্র ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী ঘরানার লোকজনের সংখ্যা বেশি। বর্তমানে যারা আসামি নন, তারাই বাজার পরিচালনা করছেন।
২০২৫ সালের ৩১ মে হাটে দায়িত্ব পালনরত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারের সাথে বাজার কমিটির লোকজনের তর্কবিতর্ক ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপকে প্রধান আসামি করে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এখন পর্যন্ত ওই মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
এর আগে, ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ৩১ জানুয়ারির পর বন্ধের নির্দেশ দেন। মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা অনুমোদনহীন হাট পরিচালনা করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট করলে জেলা প্রশাসনের আদেশ স্থগিত করে রুল জারি করা হয়। এরপর থেকে বাজার কমিটি প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, হাটটি নিয়ে প্রশাসন ও বাজার কমিটির মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ায় এর কোনো প্রত্যয়ন বা অর্থ আদায়ের আইনগত ভিত্তি নেই।
জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ বলেন, ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসছেন, এলাকার জনতাই বাজার বসিয়েছে। বর্তমানে তাদের কমিটি বাজার পরিচালনা করছে না। যুব সমাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে, তারা হয়তো প্রত্যয়নের মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকা আদায় করছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ দুলাল মিয়া জানান, মামলার আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়েছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, তাদের পক্ষ থেকে কোনো খাস আদায় করা হচ্ছে না। কেউ যদি রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকে, সেটা অবৈধ। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে হাটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি উঠেছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর