
যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আটক দুই আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ নিয়ে হবিগঞ্জের সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের মুকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জরিপ খানের মেয়ে রেবি খান, তার ভাই ফয়েজ খান, হাবিবুর খান এবং লিজার স্বামী মোঃ শোয়াইবুর খানের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী লিজা আক্তার ওরফে নাজিরা আক্তার লিজা। লিজা নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের ইলাছ মিয়ার কন্যা।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর শোয়াইবুর খানের সঙ্গে লিজার বিয়ে হয়। শোয়াইব আইইএলটিএস সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য লিজার বাবার বাড়ি থেকে প্রথমে ১৫ লাখ এবং পরে ১২ লাখ টাকা নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ লিজা ও শোয়াইবুর ব্রিটেনে যান। কিছুদিন পর শোয়াইবের ভাই হাবিবুর খান যুক্তরাজ্যে যেতে চাইলে আসামিরা লিজার কাছে আরও ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে তালাক দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে গত বছরের ৩ অক্টোবর লিজাকে দেশে পাঠানো হয়।
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল লিজা স্বামীর বাড়িতে অবস্থানকালে আসামিরা পুনরায় ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ৪ নম্বর আসামি (স্বামী) মোবাইল ফোনে বলেন, "শালির বেটি টাকা দেবে না, খুন করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেব।"
এরপর ১ নম্বর আসামি রেবি খান রান্নাঘর থেকে গরম খুন্তি দিয়ে লিজার হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পালাতে গেলে ২ ও ৩ নম্বর আসামি তাকে মারধর করেন এবং গলা চেপে হত্যার চেষ্টা চালান। লিজা কৌশলে তার ভাবীকে ফোন করে খবর দিলে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় গত ৬ জুন সিলেটের ওসমানীনগর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল বিশ্বনাথ উপজেলার দশ গ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে রেবি খান ও ফয়েজ খানকে আটক করে বিশ্বনাথ থানায় সোপর্দ করে।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, আসামিদের নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, আসামিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান জানান, রেবি খান ও ফয়েজ খান নামের দুই আসামিকে থানায় হস্তান্তরের পর প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও রেবি খানের সাথে দুই বছরের কন্যা সন্তান থাকায় এবং ফয়েজ খান অসুস্থ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর