
কোরবানি ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। কাস্টমস, ব্যাংক, শিপিং এবং সিএন্ডএফ এজেন্টদের কর্মতৎপরতায় বন্দর আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। তবে ঈদের ছুটির কারণে আমদানি পণ্য খালাস বিলম্বিত হওয়ায় বন্দরের প্রায় ৮০ শতাংশ ইয়ার্ড কন্টেইনারে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর ফলে নতুন জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামানো এবং খালাস করার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯টি বেসরকারি ডিপো থেকে বন্দরে কন্টেইনার এলেও সেই অনুযায়ী কন্টেইনার ডিপোগুলোতে স্থানান্তরিত না হওয়ায় বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৬,২১৫ টিইইউএস কন্টেইনার ছিল। ছুটির ১১ দিনে বন্দরে ৪২,৭৯৫ টিইইউএস আমদানি কন্টেইনার আসে এবং ৪২,০৪২ টিইইউএস রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজীকরণ হয়। একই সময়ে বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে ১৫,৯৪৮ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য ভর্তি এবং ৬,৬২৫ টিইইউএস খালি কন্টেইনার আসে। এছাড়া ৯,৮০২ টিইইউএস আমদানি পণ্য ভর্তি এবং ৫,২৮৩ টিইইউএস খালি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে পাঠানো হয়।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরে ৮,৮৮৮ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে ৯৮টি পণ্য ও কন্টেইনারবাহী জাহাজ অবস্থান করছে, যার মধ্যে ৫৫টি জাহাজ থেকে কন্টেইনার ও বাল্ক পণ্য খালাস করা হচ্ছে। ৪ জুন বন্দরে ১৪৭টি জাহাজ ছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে ৫,২০৬ টিইইউএস কন্টেইনার বন্দরে নেমেছে এবং ঢাকা আইসিডি থেকে ১৮৬ টিইইউএস কন্টেইনার এসেছে। অফডকগুলো থেকে ২,৩২৪ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য ভর্তি এবং ৮৩৭ টিইইউএস খালি কন্টেইনার এসেছে।
একইভাবে, ৩,৬৮২ টিইইউএস কন্টেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে, ৮৯ টিইইউএস কন্টেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে, ১,২১১ টিইইউএস আমদানিপণ্য ভর্তি কন্টেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে এবং বন্দর থেকে ৯৯২ টিইইউএস খালি কন্টেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ৪৩৭ টিইইউএস আমদানিপণ্যবাহী কন্টেইনার সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে এবং বন্দর অভ্যন্তর থেকে ৭৮৮ টিইইউএস কন্টেইনার খালাস করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ছুটির কারণে পণ্য ডেলিভারি কম হওয়ায় কন্টেইনার জমে গেছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আমদানিকারকদের দ্রুত পণ্য খালাস করার জন্য অনুরোধ করছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ছুটি থাকায় ব্যাংক, কাস্টমস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় আমদানিকারকরা পণ্য খালাস করতে পারেননি। এখন সবকিছু খুলে যাওয়ায় দ্রুত পণ্য ডেলিভারি বাড়বে এবং জট কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জটের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, কন্টেইনার জট বাড়লে জাহাজের বার্থিংয়ে দেরি হয়, ফলে আমদানিকারকদের অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলে।
উল্লেখ্য, গত মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রতিবাদে কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মসূচি পালন করায় শুল্কায়নসহ কাস্টমসের অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ ছিল। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট দেখা দেয় এবং কন্টেইনারের সংখ্যা ৪১ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় ধীরে ধীরে জট কমে আসে। ঈদের ছুটির আগে ৪ জুন বন্দরে ২৮ হাজার টিইইউএস আমদানি কন্টেইনার ছিল।
এরপর গত ৫ জুন থেকে কোরবানি ঈদের টানা আট দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়। ছুটির শেষ দিন ১৪ জুন বন্দরে কন্টেইনারের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। রোববার (১৫ জুন) থেকে সরকারি দপ্তরগুলো খুলেছে এবং কর্মকর্তারা বন্দর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর