
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বৈষম্য নিরসনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতার মতো কর্মসূচিগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল এবং এর একটা বড় অংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় না। দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন কর্মসূচিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন তাঁরা।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান খান। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন সাবেক ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের চেয়ারম্যান ড. এম এম আকাশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।
মহসিন আলী বলেন, সুবিধাভোগী নির্বাচনে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সামাজিক সুরক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করা। সরকারি সেবাখাতে যুবকদের সম্পৃক্ত করে সামাজিক সুরক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ সাইদুর রহমান খান বলেন, ভাতা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে নগদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে অভিযোগের মাত্রা কমে এসেছে। একই ব্যক্তি যাতে দুই জায়গায় ভাতা নিতে না পারেন, সে জন্য দ্বৈততা পরিহারে কাজ চলছে।
অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, শিশু ও বৃদ্ধসহ যারা আয় করতে পারছে না, তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবার থেকে আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, এবারের বাজেট গতানুগতিক। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে নতুন করে দরিদ্র হওয়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এর গবেষণা পরিচালক ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সঠিক ব্যক্তি যাতে উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন, সে জন্য ‘ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি (ডিএসআর)’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী ৬০ লাখ ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬১ লাখ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার জন বাড়িয়ে ২৯ লাখ করা হচ্ছে।
বক্তারা সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, সুবিধাভোগী নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দেন। তাঁরা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন কর্মসূচি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ ছাড়া বাকিগুলো বাজেটেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সভায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ থেকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোকে আরও যাচাই-বাছাই করে দরিদ্র এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীবান্ধব করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া শহরে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন কর্মসূচি গ্রহণ এবং উপকারভোগী জনগোষ্ঠী নির্ধারণে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা বলেন বক্তারা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর