
শেরপুর: আধুনিক সেলুনের চাকচিক্য আর আরামদায়ক পরিবেশে চুল-দাড়ি কাটার সুযোগ থাকলেও, নালিতাবাড়ীর কালাচাঁন রবিদাসের ভ্রাম্যমাণ সেলুনের কদর আজও কমেনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে কম খরচে মানুষের চুল-দাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামের মানুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পিঁড়িতে বসে এক যুবক চুল কাটছেন, আর কালাচাঁন রবিদাস পরম যত্নে সেই কাজটি করছেন। সেখানে চুল-দাড়ি কাটার জন্য অপেক্ষারত আরও কয়েকজন মানুষ।
মুকুল হোসেন নামের একজন জানান, কালাচাঁন রবিদাস ভ্রাম্যমাণ নাপিত হলেও তার কাজের মান বেশ ভালো। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাদের বাড়িতে এসে চুল কেটে দিয়ে যান।
গ্রামবাসী জানায়, একসময় দেশের হাটবাজার ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের দেখা মিলত। কালের বিবর্তনে তাদের সংখ্যা এখন খুবই কম।
কালাচাঁন রবিদাসের বাড়ি সিধুলি গ্রামে। ৪৫ বছর বয়সী এই নরসুন্দর দুই যুগের বেশি সময় ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল-দাড়ি কাটেন।
আক্ষেপ করে কালাচাঁন জানান, তার সাথে যারা ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর হিসেবে কাজ করতেন, তাদের অনেকেই এখন পেশা পরিবর্তন করেছেন অথবা আধুনিক সেলুনে কাজ করছেন। আর্থিক অভাবের কারণে সেলুন দিতে না পারায়, তিনি এখনও ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কালাচাঁনের ভ্রাম্যমাণ সেলুনে রয়েছে চিরুনি, কাপড়, ছোট আয়না, ক্ষুর, কাঁচি, ক্রীম, ফিটকিরি ও একটি টুল। কম খরচে যারা চুল-দাড়ি কাটতে চান, তারাই মূলত তার প্রধান গ্রাহক।
তিনি বলেন, "এই পেশায় এখন আর আগের মতো আয় নেই। দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। আধুনিক সেলুনগুলোর কারণে মানুষ এখন আর খোলা জায়গায় চুল কাটাতে চায় না।"
অভাবের সংসারে ডাল-ভাত জোগানোই কঠিন, তাই আধুনিক সেলুন করার স্বপ্ন তার কাছে আকাশকুসুম।
কালাচাঁনের নিয়মিত গ্রাহক সাইদুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কালাচাঁনের কাছে সেভ করেন এবং তার কাজে তিনি সন্তুষ্ট।
আন্ধারুপাড়া গ্রামের চার রাস্তার মোড়ে বাঁশ ঝাড়ের ছায়ায় কালাচাঁনের কাছে দাড়ি কাটতে আসা সুমন মিয়া জানান, চেয়ার টেবিলের অভাবে টুলে বসেই চুল-দাড়ি কাটতে হয়, তবে কালাচাঁন ভালো মনের মানুষ এবং তার কাজের প্রতি আন্তরিক।
কালাচাঁন রবিদাসের দুই মেয়েকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে সিধুলী গ্রামে বসবাস করেন।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর