
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের গোরখোদক মনু মিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) শনিবার সকাল ১০টায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল। তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ৩ হাজার ৫৭ জন মানুষের কবর খুঁড়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মনু মিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং দাফনকাজে সহায়তা করতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন জনপ্রিয় অভিনেতা খাইরুল বাশার। দাফন শেষে তিনি মনু মিয়ার বাড়িতে যান এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি যেকোনো প্রয়োজনে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
মনু মিয়াকে শেষবারের মতো দেখতে এসে অভিনেতা খাইরুল বাশার বলেন, “মনু কাকা একজন খাঁটি মানুষ ছিলেন। তিনি আমার দেখা সবচেয়ে সেরা মানুষ। আমি তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।”
তিনি আরও বলেন, মনু মিয়া বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়তেন এবং মৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোনো খাবার গ্রহণ করতেন না।
খাইরুল বাশার জানান, মনু মিয়া অসুস্থ থাকাকালীন তিনি তাঁর ঘোড়া কিনে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনু মিয়া কারও মৃত্যু সংবাদ শুনেই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কবরস্থানে ছুটে যেতেন এবং পরম যত্নে কবর খুঁড়তেন। কবর খননের কাজে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য তিনি নিজের জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন। সম্প্রতি সেই ঘোড়াটি দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলে।
মনু মিয়া শুধু কবর খনন করেই থেমে থাকেননি, তিনি যাদের কবর খুঁড়েছেন তাদের মৃত্যুর তারিখও লিখে রেখেছেন। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
নিঃসন্তান মনু মিয়া জীবনভর কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের শরীরের প্রতি তেমন যত্ন নেননি। ফলে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে। গত ১৪ মে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর শনিবার সকালে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর