
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃত ফেল করানো, চেম্বারে ডেকে কুপ্রস্তাব দেওয়া, নেকাব নিয়ে কটাক্ষসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বুধবার উপাচার্য বরাবর অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
তবে এর আগে থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিভাগটির কয়েকজন শিক্ষক। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিগত তিন দিনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করেছে বিভাগের শিক্ষকরা। বিভাগের সভাপতি এবং একজন জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপক অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে জোর তদরিব করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, এসব অভিযোগ নিয়ে গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন ডজনখানেক শিক্ষার্থী। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগ কর্তৃপক্ষ গত ২৮ জুন ড. আজিজুল ইসলামকে বিভাগীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে শুধুমাত্র অব্যাহতি নয়, অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, তবে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বাঁচাতে ভুক্তভোগীদের চাপ দিচ্ছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদা ও বিভাগের জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন। মঙ্গলবার বিভাগের সভাপতি ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি বিভাগের বাইরে না জানানোর অনুরোধ করেন। পরে ড. আনোয়ারুল হক আবারও তাদেরকে নিয়ে ম্যানেজ করতে আলোচনায় বসেন। এসময় তিনি ভুক্তভোগীদের দুপুরের খাবারের জন্য পনেরো হাজার টাকা দেন। কিন্তু ছাত্রীরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া কয়েক বছর আগে এক ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটনায় সে বিভাগে অভিযোগ দেন।। কিন্তু সে ঘটনাটি শিকক্ষরা কোনোরকম মিটমাট করে একপ্রকার ঢেকে দেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এরপরও ওই ছাত্রীর সঙ্গে একই ঘটনা বারবার ঘটেছে। পরে ওই শিক্ষার্থী আর ভয়ে মুখ খুলেন নি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী উম্মে হাবিবা ( ছদ্মনাম) বলেন, ‘আজিজ স্যার আমাকে রিকেট পরীক্ষার আগের দিন তার রুমে ডেকে বলেন, তোমার ফিগার ভালো, শাড়ি পরলে ভালো লাগবে।’ তিনি আমাকে তার কথার মাধ্যমে বুঝালেন, সম্পর্ক ভালো রাখলে রেজাল্ট ভালো হবে। পরে তাকে স্পেস না দেওয়ায় আমার পরবর্তী সেমস্টিার হতে রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে।
আরেক ছাত্রী কথা নাহিয়ান (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আজিজ স্যার আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন দিত। উদ্দেশ্য খারাপ হওয়ায় আমি তাকে আনফ্রেন্ড করে দিই। পরে ক্লাসে সবার সামনে আমাকে আজেবাজে কথা বলতেন এবং তার কোর্সে ফেল করানোর হুমকি দিতেন। বিভাগের প্রথম আমিই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যাররা বিষয়টা সমাধান করে দিলেও তিনি আমার সঙ্গে একই আচরণ করে আসছিলেন। পরে ভয়ে আমি আর কোনো কথা বলিনি।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে বিভাগের জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন বলেন, বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমি তাদেরকে নিয়ে বসেছিলাম। ঘটনা গোপন রাখা বা শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি পুরোপরি মিথ্যা। তবে তাদেরকে নিয়ে আমি লাঞ্চ করতে চেয়েছিলাম। আমিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদা বলেন, ওই শিক্ষক বাঁচানোর আমরা কেউ না। বিভাগ থেকে নিয়ম মোতাবেক আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকিটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়েছি। পদ্ধতিগতভাবে আমরা তদন্ত কমিটি করবো। তদন্তের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আজিজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছিল। তবে এতোদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে আজিজুলের বিরুদ্ধে মার্কসের প্রলোভন চেম্বারে ডেকে কুপ্রস্তাব দেয়া, প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেল করানো, ভাইভাতে নেকাব নিয়ে কটাক্ষ, মানসিক নির্যাতন, মেয়েদের নিয়ে করুচিপূর্ণ মন্তব্য, পিরিয়ড ও গোপনাঙ্গ নিয়ে কথা বলা, কোর্সে ফেল করানোর হুমকি, ইমোতে মেয়েদের ভিডিও কল, সুসম্পর্ক থাকলে রেজাল্ট ভালো করানোর অফার, রাতে কথা বলা, প্রস্তাবে রাজি না হলে রেজাল্ট খারাপ করানোর হুমকি, ভাইভাকে আনচার না দিকে দেয়া, ইনকোর্সে ০-১ নম্বর দেয়া ও মেয়েদের ছবি চাওয়া, ব্যক্তিগত ও কনজ্যুনাল লাইফ নিয়ে অপমানের অভিযোগ রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর