
মার্কিন রাজনীতিতে এক বড় চমক দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক। স্থানীয় সময় শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্মের ঘোষণা দেন। তার ভাষায়, এই দল এসেছে "আমেরিকানদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে"।
মাস্কের এই ঘোষণা আসে এমন এক সময়ে, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিতর্কিত ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল’ করছাড় ও ব্যয়বৃদ্ধি বিল সই করেছেন। মাস্ক ওই বিলের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, “এটি আমেরিকাকে দেউলিয়া করে দেবে।” তিনি দাবি করেন, বিলটি বার্ষিক বাজেট ঘাটতি ২ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২.৫ ট্রিলিয়নে নিয়ে গেছে।
একসময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন ইলন মাস্ক। তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছিলেন এবং তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনে "সরকারি ব্যয় দক্ষতা বিভাগ" পরিচালনাও করেছিলেন। তবে বাজেট ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্পের নীতির তীব্র বিরোধিতা করে এখন তার একসময়কার সমর্থক মাস্ক সরাসরি বিরোধিতায় নেমেছেন। এক্সে এক অনুসারীর প্রশ্নের উত্তরে মাস্ক বলেন, “যা আমাকে ট্রাম্পের ভক্ত থেকে সমালোচকে পরিণত করেছে, সেটি হলো এই বিশাল বাজেট ঘাটতি।”
‘আমেরিকা পার্টি’ ঘোষণার আগে মাস্ক এক্স-এ একটি জনমত জরিপ চালান, যেখানে প্রায় ২:১ ব্যবধানে ব্যবহারকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন। এই ফলাফলকে সামনে রেখেই মাস্ক ঘোষণা দেন, “আজ ‘আমেরিকা পার্টি’র জন্ম হলো।” মাস্ক বলেন, “আমরা ‘ইউনিপার্টি’ ব্যবস্থাকে ভাঙব গ্রিক কৌশলবিদ এপামিনোনডাসের মতো—নির্দিষ্ট এক জায়গায় তীব্র ও কেন্দ্রীভূত আঘাত হানব।” তার ইঙ্গিত, নতুন দলটি যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারক কয়েকটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থী দিয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
মাস্কের রাজনৈতিক পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন ফিরে এলে মাস্কের কোম্পানিগুলোর সব ধরনের সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাল্টা জবাবে মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এমন কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেন, যারা ট্রাম্পের বিলকে সমর্থন করেছেন।
মাস্কের এই ঘোষণা মার্কিন রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় ১৬০ বছরের রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট দ্বিদলীয় কাঠামোতে নতুন কোনো দলের টিকে থাকা কঠিন। তবুও মাস্কের বিপুল সম্পদ, প্রযুক্তি খাতের প্রভাব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আধিপত্যের কারণে 'আমেরিকা পার্টি' স্বল্প মেয়াদে হলেও রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি মাস্ক কৌশলগতভাবে নির্ধারক কিছু আসনে প্রার্থী দেন, তবে কংগ্রেসের ভারসাম্য বদলে যেতে পারে।
এই রাজনৈতিক সংঘাতের প্রভাব পড়েছে ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যেও। টেসলার শেয়ারের দাম গত নভেম্বরে ৪৮৮ ডলার থেকে এপ্রিলের মধ্যে অর্ধেকে নেমে আসে। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৩১৫.৩৫ ডলারে। বিনিয়োগকারীরা মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলেও জানান মার্কেট বিশ্লেষকরা।
যদিও হোয়াইট হাউস বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্কের এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, বিবিসি
সর্বশেষ খবর