
কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা হাজারো পরিবার বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটায়। শহরের মানুষের কাছে বর্ষা রোমান্টিক হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কাছে তা বিভীষিকাময়। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় প্রতি মুহূর্তে তারা মৃত্যুর প্রহর গুণতে থাকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১০ সালের এক ভোরে টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে ৩৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা আজও তাদের স্মৃতিতে টাটকা। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেক আশ্বাস দেওয়া হলেও দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে এখনো হাজারো মানুষ পাহাড়ের গা ঘেঁষে বাঁশ, টিন আর প্লাস্টিকের তৈরি ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
টেকনাফ পৌর এলাকার পুরাতন পল্লান পাড়ার বাসিন্দা সমজিদা বেগম জানান, তারা গরিব মানুষ। তাই বাধ্য হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে ঘর তুলেছেন। বৃষ্টি শুরু হলেই পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়।
বর্তমানে মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়েছে, আবার অনেকে মৃত্যুভয়ে ভীত।
চার মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মোস্তফা খাতুন বলেন, গতকাল রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে না এলে হয়তো আজ তাদের লাশ হয়ে থাকতে হতো। তিনি সরকারের কাছে একটি নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসনের দাবি জানান।
পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আবদুল্লাহ জানান, বর্ষা এলেই তারা নির্ঘুম রাত কাটান। দরজা খোলা রাখেন, যাতে দ্রুত পালাতে পারেন।
আবু ছৈয়দ নামের একজন বাসিন্দা জানান, ২০ বছর ধরে তিনি ওই পাহাড়ে বসবাস করছেন এবং চোখের সামনে অনেককে মরতে দেখেছেন। যাওয়ার জায়গা না থাকায় সেখানেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি সরকারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।
জুহুরা বেগম জানান, পাহাড় ধসে তার ঘর ভেঙে গেছে। সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। বৃষ্টি থামলে কোথায় যাবেন, সেই চিন্তায় তিনি দিশেহারা।
টেকনাফ পুরাতন পল্লান পাড়ার সিপিপি লিডার কুলসুমা আক্তার জানান, তাদের কর্মীরা ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গাসহ অনেকে পাহাড় কেটে ঘর তুলেছে। এদের দ্রুত সরিয়ে না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনকে তিন বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের জন্য ১৫ টন ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা পানিবন্দি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৪ জুন টেকনাফে পাহাড়ধসে ৩৩ জন এবং ২০১০ ও ২০১২ সালে উখিয়ায় আরও ১৫ জন নারী-শিশু প্রাণ হারান।
সর্বশেষ খবর