
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ‘খাস কালেকশন’-এর নামে অর্থ আদায়ের অনিয়ম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো প্রকার অর্থ উত্তোলন না করার কথা জানিয়েছেন।
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন জানান, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে কাউকে টাকা আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের ইজারা না হলেও বিগত তিন মাস ধরে জেলা পরিষদের কিছু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছিল।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ এবং কক্সবাজার পৌরসভার জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি চক্র জেটিঘাট থেকে ‘খাস কালেকশন’-এর নামে অর্থ আদায় করছিল। অফিসের এক নৈশ্যপ্রহরীকে ‘ইজারাদার’ দেখিয়ে এই অর্থ আদায় করা হচ্ছিল। এমনকি ঘাটটি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। তদন্তে জানা যায়, শাহপরীর জেটি ১৫ লাখ টাকায়, জালিয়াপাড়া ঘাট ৭ লাখ এবং দক্ষিণ পাড়া ঘাট ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, মাছ ধরার বড়শির জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং পানি সংগ্রহের জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৬ জুন তড়িঘড়ি করে ‘খাস কালেকশন’ অনুমোদনের নামে একটি চিঠি তৈরি করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়, সংশ্লিষ্ট ৯টি দপ্তরে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো চিঠি তাদের দপ্তরে পৌঁছায়নি।
সরকারি বিধি অনুযায়ী, ইজারা না হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে জেলা পরিষদ প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় খাস কালেকশন আদায় করতে পারে। তবে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন অফিস সহায়ককে, যিনি সরকারি ফি আদায়ের যোগ্য নন।
স্থানীয় জেলেরা জানান, প্রতিটি যাত্রী থেকে ১০-২০ টাকা, মাছের ড্রামপ্রতি ১০০ টাকা, এবং ট্রলারপ্রতি বছরে ৪ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছিল। এসব টাকার জন্য পিয়নের নামে রশিদও ছাপানো হয়েছিল।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২০০৪ সালে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটি নির্মাণ করে। পরে ২০০৬ সালে এটি জেলা পরিষদের অধীনে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে ইজারা দেওয়া হলেও ২০২৫ সালে তা হয়নি। এই সুযোগে ‘খাস কালেকশনের’ নামে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর