
নবীগঞ্জ শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহত পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের আউয়াল মিয়ার পুত্র ফারুক মিয়া (৪৫) সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এছাড়া আরও ২০ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাংলাবাজার এলাকায় মৎস্যজীবী ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও ২০ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলা গণ অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি আশাইদ আলী আশা ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম তালুকদারের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম তালুকদারের শালা খসরু মিয়ার সঙ্গে আশাইদ আলী আশার কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়। এর জের ধরে গত চার দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল, যা সংঘর্ষের রূপ নেয়।
গতকাল রবিবার রাতে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির সভায় ওই দুই সাংবাদিককে মারামারির কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সকালে আনমনু ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের লোকজন নিজ নিজ এলাকায় প্রস্তুতিমূলক সভা করেন। এরপর বিকেল ৩টার দিকে উভয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সংঘর্ষটি সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শহরের দুই শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়। মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ইউনাইটেড হসপিটালে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পশ্চিম বাজারের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানেও ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল ৪টা থেকে নবীগঞ্জ শহরের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন। ১৪৪ ধারা জারির পরেও তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। পরে যৌথবাহিনী লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে এই সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ জানায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এমএনএস সাজেদুর রহমান জানান, একজন মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, নবীগঞ্জের মারামারির ঘটনায় আনমনু গ্রামের রিমন নামে একজন মারা গেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে। তবে সিলেট এমজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, রিমন মিয়া সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাননি, তিনি আইসিইউতে কোমায় আছেন।
যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর