
মানিকগঞ্জের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ‘দেশ সেবা ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এর বিরুদ্ধে সংক্রমিত রক্ত সরবরাহের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন খাদিজা আক্তার (২০) নামের এক তরুণী।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, গত ৭ জুলাই শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে খাদিজার জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। ‘দেশ সেবা ব্লাড ব্যাংক’ থেকে রক্ত আনার পর ক্লিনিকের নার্স রক্তের রিপোর্টে অসঙ্গতি দেখতে পান। পরীক্ষার তারিখ ও স্ক্রিনিং রিপোর্ট অস্পষ্ট থাকায় সন্দেহ হয়। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পুনরায় পরীক্ষা করে রক্তে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের উপস্থিতি পায়।
খাদিজার স্বামী শাহ আলম জানান, টাকার বিনিময়ে রক্ত নেওয়ার পরেও এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা তারা কল্পনাও করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ‘ভাড়াটে রক্তদাতা’ ব্যবহার করে, যাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। এছাড়াও রক্ত সংগ্রহের পর এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি/সি এবং সিফিলিসের মতো রোগের সংক্রমণ পরীক্ষাও முறையாக করা হয় না।
‘সেইভ ব্লাড ট্রান্সফিউশন আইন-২০০২’ অনুযায়ী, রক্ত সংগ্রহের সময় এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ও সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়াসহ পাঁচটি ট্রান্সফিউশন-ট্রান্সমিটেবল ইনফেকশন (টিটিআই) স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও প্রশিক্ষিত জনবল ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান রক্ত সংগ্রহ বা সরবরাহ করতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘দেশ সেবা ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ ২০১২ সালের মার্চ মাসে তিন বছরের জন্য অনুমোদন পেলেও, গত এক দশকে লাইসেন্স নবায়ন করেনি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্সও নবায়ন করা হয়নি।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম রেজা জানান, তিনি শুধু ডোনার ম্যানেজ করে দিয়েছেন এবং কোনো পরীক্ষা করাননি।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি ডা. বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, রক্ত জীবন রক্ষাকারী উপাদান হলেও, এটি মুনাফার হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। তিনি রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে রক্ত সরবরাহ ফৌজদারি অপরাধের শামিল এবং প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খুরশিদ আলম জানান, লাইসেন্স নবায়ন না থাকলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর