
**ঢাকা, (তারিখ):** বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমাজের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি তুলে ধরে। ফেডারেশনের নেতারা মনে করেন, এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন গতি পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জুলাই মাস জাতীয় ইতিহাসে গণজাগরণের মাস হিসেবে স্মরণীয়। তারা জুলাই বিপ্লবের শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও শিক্ষা খাতে দৃশ্যমান কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষা খাতে বৈষম্য, অবহেলা ও বিশৃঙ্খলা আগের মতোই রয়ে গেছে।
শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ও এর শিক্ষাক্রমের সমালোচনা করে বলেন, এর মাধ্যমে ঈমান-আকিদাবিরোধী, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধহীন প্রজন্ম তৈরির চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো:
১. বেসরকারি, এমপিওভুক্ত ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত:
* শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব বোনাস, সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান।
* প্রাথমিক স্তরে ২০২৬ সাল থেকে ধর্মীয় শিক্ষা চালু এবং ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ। প্রধান শিক্ষকদের বেতন নবম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে প্রদান।
* শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা চালু এবং পাঠ্যপুস্তক থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী বিষয় বাদ দেওয়া।
* শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, গবেষণা কর্মের সুযোগ দেওয়া এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলির ব্যবস্থা করা।
* স্বচল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে আগস্ট মাস থেকে বেতন ভাতা প্রদান করা।
* বেসরকারি কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষকদের আট বছর পূর্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি এবং সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করা।
* বৈষম্যের শিকার, চাকরিচ্যুত, সাময়িক বরখাস্ত ও বিতাড়িত শিক্ষক-কর্মচারীদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে পুনর্বহাল এবং বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা। এছাড়া, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ভাতাসহ সকল পাওনা পরিশোধের বিষয়ে সরকারিভাবে নির্বাহী আদেশ জারি করা।
* সৎ ও যোগ্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে অবিলম্বে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কমিটি গঠন করা।
* প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফাজিল ও জেলায় একটি করে কামিল মাদরাসা সরকারিকরণ করা।
* কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা।
* নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের লক্ষ্যে অবিলম্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করা। মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন মাঠ পর্যায়ে বা শিল্প কারখানায় শ্রমের শিক্ষা দেওয়া এবং পার্ট-টাইম ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া।
* ভোকেশনাল শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার মূল ধারায় যুক্ত করে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন সহজ করা।
* দেশীয় প্রযুক্তিকে উন্নত করার মাধ্যমে মেধাবীদের মূল্যায়নের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং বেকারদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
* শিক্ষার সকল স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় ও নৈতিকতাবোধের আলোকে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা।
* সকল শ্রেণিতে মহানবী (সা.)-এর জীবনীসহ মহামানবদের জীবনী সংবলিত প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা সংযোজন করা।
* কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্তরগুলোকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দেওয়া, কওমি মাদ্রাসাসমূহের সকল বোর্ডকে একটি বোর্ডে রূপান্তর এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক মাস্টার্সের সার্টিফিকেট প্রদান করা।
* ধর্মীয় দায়িত্ব পালন ও মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহের লক্ষ্যে স্কুল, কলেজসমূহে ধর্মীয় বা আরবি ভাষা শিক্ষক হিসেবে এনটিআরসিএ দ্বারা নিয়োগ প্রদান করা।
* প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ী মনোভাব দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেমন সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তাদের থেকে শিক্ষা সেবা মর্মে অঙ্গীকার নেওয়া এবং IQAC নিশ্চিত করা।
* বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামো রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া।
* স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান অনুমতি, স্বীকৃতি প্রদান এবং এমপিওকরণ নীতিমালা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করা।
* স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নীতিমালা ২০২৫ পরিপূর্ণ অনুসরণ করে প্রতি তিন মাস পর পর যে সকল মাদ্রাসা এমপিও অর্জনের যোগ্যতা পূরণ করেছে, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত করা।
* যে সকল মাদ্রাসা জাতীয়করণের শর্ত পূরণ করবে, সেগুলোকে নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে এমপিও ও জাতীয়করণ করা।
* অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ তহবিলে ইতোমধ্যে যারা আবেদন করেছেন, তাদের প্রাপ্য সরকারি তহবিল থেকে অবিলম্বে প্রদান করা।
* ১৭ ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও যারা বাদ পড়েছেন, তাদের অবিলম্বে নিয়োগ প্রদান করা।
দাবি আদায় না হলে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ফেডারেশন নেতারা শিক্ষক সমাজের অতীত ভূমিকাকে মূল্যায়ন করে দাবিগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান। তারা বলেন, শিক্ষা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি এবং শিক্ষক সমাজ মর্যাদার প্রতীক।
সর্বশেষ খবর