
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর পূর্ব পাড়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নির্মিত দেশের প্রথম পুনর্বাসন প্রকল্পের বরাদ্দ তালিকায় অনিয়ম ধরা পড়েছে। ৪ হাজার ৪০৯টি ফ্ল্যাটের ওই তালিকা থেকে প্রকৃত দরিদ্র ও বাস্তুচ্যুতদের বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে তালিকাটি বাতিল করেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২০১১ সালে প্রণীত তালিকাটি ত্রুটিপূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে।
খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৫৩ একর সরকারি জমিতে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০০ পরিবারকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, প্রকৃত জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বদলে সেখানে বরাদ্দ পেয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় কর্মীরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের সময় খুরুশকুলের পশ্চিম পাশের ২১টি মহল্লার প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার উচ্ছেদ হয়। ২০১১ সালে তাদের পুনর্বাসনের জন্য তালিকা তৈরি করা হলেও ২০১৬ সালে হালনাগাদ করার সময় প্রায় এক হাজার প্রকৃত উপকারভোগীকে বাদ দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামালের বোন মিনা বেগম ও তার স্বামী খালেদ মোশাররফ, আওয়ামী লীগ নেতা আতিক উল্লাহ, আজিজ উদ্দিন, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী টিপু সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হানিফ এবং কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ খোরশেদ, আবু তাহের, সিরাজুল করিম ও জিল্লুল করিম ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন। এদের অনেকেই প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা নন।
তালিকায় বিএনপি নেতা আবুল বশর, সাবেরের মেয়ে তানিয়ার নাম থাকারও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, স্বামী-স্ত্রীর নামে একাধিক ফ্ল্যাট বরাদ্দের নজিরও পাওয়া গেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক মেয়র মুজিবর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সরওয়ার আলম এবং জেলা যুবদলের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল ইসলামও সরকারি ফ্ল্যাট দখল করেছেন, যদিও তারা জলবায়ু উদ্বাস্তু নন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানোর পরেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এই অনিয়মের দায় জেলা প্রশাসন এড়াতে পারে না। তাদের মতে, প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় অনিয়ম সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলেও দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে এটি এখন হতাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর