• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৮ সেকেন্ড পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২৫, ১০:৫৭ দুপুর

গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ: পরিকল্পিতভাবে শহর ধ্বংস করছে ইসরায়েল

ফাইল ফটো

গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতে ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে হাজার হাজার বেসামরিক ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে—এমন তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করেছে বিবিসির অনুসন্ধানী বিভাগ BBC Verify। মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসার পর ইসরায়েল এই ধ্বংসযজ্ঞ জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহেই গাজার বহু শহর ও উপশহর—যেখানে একসময় লক্ষাধিক মানুষের বসতি ছিল—মাটি সমতল করে দেওয়া হয়েছে।

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলি সামরিক কর্তৃপক্ষ যেসব এলাকা “অপারেশনাল কন্ট্রোল”-এ আছে বলে দাবি করছে, সেখানে ব্যাপক ধ্বংসসাধন হয়েছে। এর বড় অংশই পরিকল্পিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে, শুধু আগেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবন নয়—অনেক তুলনামূলক অক্ষত কাঠামোও ধ্বংস করা হয়েছে। যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে টাওয়ার ব্লক, স্কুল ও অন্যান্য অবকাঠামোতে বড় বিস্ফোরণের পর ধুলো ও ধ্বংসাবশেষের বিশাল মেঘ উঠতে দেখা গেছে।

বহু আইন বিশেষজ্ঞ BBC Verify-কে জানিয়েছেন, দখলীকৃত এলাকায় অবকাঠামো ধ্বংসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী জেনেভা কনভেনশনের বিধান লঙ্ঘনের সম্ভাবনা রয়েছে—যা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) অবশ্য বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে অভিযান পরিচালনা করে; হামাস বেসামরিক এলাকায় “সামরিক সম্পদ” লুকিয়ে রাখে এবং “অত্যাবশ্যক সামরিক প্রয়োজন” ছাড়া সম্পদ ধ্বংস করা হয় না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা জুড়ে বিস্তৃত “নিরাপত্তা অঞ্চল” ও করিডোর তৈরি করেছে এবং এসব পথের পাশে ও আশপাশে বিপুলসংখ্যক ভবন ধ্বংস করেছে। সাম্প্রতিক একটি করিডোর পশ্চিম ও পূর্ব খান ইউনুসকে আলাদা করেছে, যার ভেতরে পড়েছে খুজা’আ ও আবাসান আল-কাবিরা। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই সীমান্তের কাছাকাছি ভবন গুঁড়িয়ে “বাফার জোন” তৈরির লক্ষণের কথা বিশ্লেষকেরা তুলে ধরেছিলেন; তবে সম্প্রতি যে সব এলাকা সমতল করা হয়েছে, তাদের অনেকই গাজার গভীরে অবস্থিত।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কিজান আবু রাশওয়ান—ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে একটি কৃষি বসতি। ১৭ মে থেকে এখানে প্রায় প্রতিটি অবশিষ্ট স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। BBC Verify যাচাইকৃত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি টাওয়ার ব্লক একযোগে মাটিতে মিশে যায়। BBC Verify এ ধরনের ধ্বংসের তালিকা IDF-এর কাছে পাঠিয়ে নির্দিষ্ট সামরিক যুক্তি জানতে চাইলেও সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পায়নি। IDF শুধু জানিয়েছে, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সামরিক অবকাঠামো লুকিয়ে রাখে এবং সেসব লক্ষ্য চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়।

আইন বিশেষজ্ঞ ইতান ডায়মন্ড (ডায়াকোনিয়া ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিটারিয়ান ল’ সেন্টার, জেরুজালেম) বলেন, সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক সম্পত্তি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নিষিদ্ধ—কেবল অতি সীমিত পরিস্থিতিতে “অবশ্যিক সামরিক কার্যকর প্রয়োজনীয়তা” থাকলে ব্যতিক্রম হতে পারে। ভবিষ্যতে কোনো স্থাপনা ব্যবহার হতে পারে—এমন আশঙ্কা বা অনুমানের ভিত্তিতে ধ্বংস আইনি ব্যতিক্রমের আওতার বাইরে পড়ে। অক্সফোর্ড ইন্সটিটিউট ফর এথিক্‌স, ল’ অ্যান্ড আর্ম্‌ড কনফ্লিক্ট-এর সহপরিচালক অধ্যাপক জানিনা ডিলের মতে, দখলদার শক্তির দায়িত্ব হলো এলাকার শাসন নাগরিকদের কল্যাণে চালানো; পুরো অঞ্চলকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা সেই দায়িত্বের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

অভিযানকে আংশিকভাবে সমর্থনকারী বিশ্লেষকরাও আছেন। ইসরায়েলের বেসা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর পরিচালক ও কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা প্রফেসর ইতেন শামির BBC Verify-কে বলেন, ধ্বংস করা বহু ভবন আগেই গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং শীতের বৃষ্টিতে সেগুলো আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত, ফলে ফিরে আসা বেসামরিকদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করত। তিনি আরও বলেন, এলাকা এখনও যুদ্ধক্ষেত্র; কোনো ভবন ইসরায়েলি বাহিনী তল্লাশি করে ছেড়ে গেলে সশস্ত্র যোদ্ধারা ফিরে এসে বোমা পেতে রাখতে বা ওত পেতে গুলি ছুড়তে পারে—এই কৌশলগত বিবেচনাও ধ্বংসের পেছনে ভূমিকা রাখে।

ধ্বংসযজ্ঞের গতি কমার কোনো লক্ষণ নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডজন ডজন D9 বুলডোজার পেয়েছে IDF, যেগুলোর সরবরাহ আগে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে স্থগিত ছিল। BBC Verify আরও শনাক্ত করেছে যে মে মাস থেকে শুরু করে ইসরায়েলি ফেসবুক গ্রুপগুলোতে গাজায় ভবন ভাঙার কাজে ঠিকাদার নিয়োগের বহু বিজ্ঞাপন পোস্ট হয়েছে। অনেক বিজ্ঞাপনে কাজের স্থান হিসেবে “ফিলাডেলফি করিডোর” এবং “মোরাগ অক্ষ” (Morag Axis) উল্লেখ করা হয়—দু’টিই বর্তমানে IDF-নিয়ন্ত্রিত এলাকা। BBC Verify মন্তব্য জানতে চাইলে অন্তত এক ঠিকাদার অশালীন ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান।

রাটগার্স ল’ স্কুলের বিশ্লেষক আদিল হক ধারণা দিয়েছেন, এসব ধ্বংসকাজের লক্ষ্য হতে পারে এমন একটি নিরাপত্তা অঞ্চল সৃষ্টি করা, যেটি ইসরায়েল স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অন্য পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, রাফাহে প্রস্তাবিত “মানবিক শহর” গড়ার প্রস্তুতি হিসেবে জমি পরিষ্কার করা হতে পারে। জেরুজালেম ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটি-র প্রেসিডেন্ট এফ্রাইম ইনবার বলেছেন, ধ্বংসের মাত্রা এমনভাবে বাড়ানো হতে পারে যাতে ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগের প্রবল আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে—যা পরে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়—বলেছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী “আরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে”, ফলে ফিলিস্তিনিদের “ফিরে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা থাকবে না।”

মাঠের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছেন গাজার তেল আল-সুলতান এলাকার মোআতাজ ইউসুফ আহমেদ আল-আবসি। তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র এক বছর আগে নতুন ঘরে উঠেছিলেন তিনি। এখন সেই ঘরসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। “সব হারিয়েছি,” তিনি জানান। “আমার আর কোনো ঘর বা আশ্রয় নেই।”

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]