দেশে স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। গত আট বছরে দেশি-বিদেশি মিলে ১৭টি মোবাইল ফোন কারখানায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় আট লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
কিন্তু এই উদীয়মান দেশীয় শিল্প এখন ভয়াবহ সংকটে পড়েছে অবৈধ বা ‘গ্রে’ হ্যান্ডসেটের দৌরাত্ম্যে। দেশের মোট মোবাইল বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই ‘গ্রে’ মার্কেটের দখলে। এর ফলে সরকার বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার বৈধ বিনিয়োগ ও লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
দেশীয় শিল্পের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তথ্য অনুযায়ী, ১৭টি মোবাইল ফোন কারখানায় মূল বিনিয়োগই আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া মোবাইল ফোন উৎপাদনকে ঘিরে দেশে প্যাকেজিং, প্রিন্টিং, ব্যাটারি, চার্জার, হেডফোন ও ডেটা কেবলের মতো সহযোগী কম্পোনেন্ট শিল্পে আরও ন্যূনতম দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এই শিল্প খাতের সঙ্গে সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার অনুমোদিত মোবাইল ফোন বিক্রেতা যুক্ত। সব মিলিয়ে উৎপাদন ও বিতরণ পর্যায়ে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ সরাসরি কর্মরত। প্রতি পরিবারে পাঁচজন সদস্য হিসেবে, ন্যূনতম আট লাখ মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
মূল বাধা ‘গ্রে’ মার্কেট দীর্ঘদিন ধরে বৈধ শিল্পের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ বা ‘গ্রে’ হ্যান্ডসেটের প্রবেশ। বাজারের ৬০ শতাংশ দখল করে থাকায় বৈধ ব্যবসায়ীরা এক অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে বাজার চলে যাচ্ছে অবৈধ ব্যবসায়ীদের নাগালে।
এই ‘গ্রে’ মার্কেট শুধু দেশীয় শিল্প বা রাজস্বের ক্ষতি করছে না, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। অবৈধ ফোন ব্যবহার করে আর্থিক প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যাতে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা যায় না।
এনইআইআর (NEIR) চালুই কি সমাধান? এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার অবশেষে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আগামী ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছে।
এই সিস্টেম চালু হলে অবৈধভাবে আমদানি করা, ক্লোন করা বা নিবন্ধনহীন কোনো ফোন দেশের নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে, দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে, হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে এবং গ্রাহক অধিকার সুনিশ্চিত হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর