
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জনতা ব্যাংক পিএলসি বাঘাবাড়ি শাখায় প্রকাশ্যে এক কর্মকর্তার হাত থেকে চেক ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তেল ব্যবসায়ী আমির হামজাকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শুকুর আলী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে। রোববার বিকেলে ব্যাংকের ভেতরে এই ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত আমির হামজাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত শুকুর আলী উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
সোমবার সরেজমিনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়িক লেনদেনের সূত্রে শুকুর আলী প্রামানিক আমির হামজার কাছ থেকে ৯৬ লাখ টাকা ধার নেন এবং জনতা ব্যাংক বাঘাবাড়ি শাখার একটি চেক দেন। কিন্তু অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে সময় চেয়েছিলেন।
টাকা দেওয়ার শেষ দিনে আমির হামজা চেকে ডিজঅনারের (প্রাপ্য টাকা অপরিশোধিত থাকার কারণে ব্যাংক কর্তৃক চেক প্রত্যাখ্যান) ডকুমেন্টস নিতে ব্যাংকে যান। ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হাবিবুর রহমান যখন চেক ডিজঅনারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমির হামজার হাতে দিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই শুকুর আলীর ভাতিজা সেলিম প্রামানিক তার কাছ থেকে চেকটি ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় শুকুর আলী প্রামাণিক, মফিজ প্রামাণিক, সেলিম প্রামাণিক, শিহাব প্রামানিক, নিষাদ প্রামানিক, মিজান প্রামানিকসহ ১০-১২ জন সংঘবদ্ধভাবে এসে চেয়ার ও হাতুড়ি দিয়ে আমির হামজাকে মারধর করেন এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাংকের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে ঘটনার পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমির হামজা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা শুকুর আলী ব্যবসার জন্য তার কাছ থেকে ৯৬ লাখ টাকা ধার নিয়ে একটি চেক দেন। তিনি বলেন, "টাকা জমা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে আমি ব্যাংকে গিয়েছিলাম। যখন জানতে পারি টাকা জমা দেওয়া হয়নি এবং ব্যাংক থেকে ডিজঅনার পেপার দেওয়া হচ্ছিল, তখনই শুকুর আলী ও তার লোকজন আমার ওপর হামলা করে এবং চেক ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।" তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুকুর আলীর লোকজন অস্ত্র নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তাদের ব্যাংকের ভেতরে আটকে রাখে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. হাবিবুর রহমান জানান, মেসার্স আমির হামজা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমির হামজা ৯৬ লাখ টাকার একটি চেক উপস্থাপন করেন। অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় শুকুর প্রামানিকের সাথে কথা বলে তাকে সময় দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, "চেক ডিজঅনার করার শেষ দিনে আমির হামজা যখন ডিজঅনার নিতে আসেন এবং আমি কাগজ তার হাতে দিচ্ছিলাম, তখনই শুকুর আলীর ভাতিজা সেলিম প্রামানিক চেকটি ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে আমরা পুলিশকে খবর দেই।" তিনি আরও জানান, ঘটনার পর পরই ব্যাংকের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
জনতা ব্যাংক বাঘাবাড়ি শাখার ম্যানেজার আলমগীর হোসেন জানান, এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ব্যাংকের কাছে চেকের ফটোকপি রয়েছে এবং সেটি দিয়ে আমির হামজা মামলা করতে পারবেন।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম আলী জানান, এ ঘটনায় ব্যাংক ম্যানেজার বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর