
তখন সময় দুপুর। স্কুলটিতে চলছিল ক্লাস। ছুটির ঘণ্টা বাজার আগ মুহূর্তেই বিকট শব্দ। কেঁপে উঠল পুরো এলাকা। আকাশ থেকে আগুনের গোলা হয়ে একটি প্রশিক্ষণ বিমান এসে বিধ্বস্ত হলো স্কুলের ভবনে। মুহূর্তেই চারদিকে ধোঁয়া, আতঙ্ক, চিৎকার আর মৃত্যুপুরীর মতো বিভীষিকাময় দৃশ্য।
এ ভয়াবহ মুহূর্তে স্কুলের ভেতরে ছিল ১০ বছরের ছোট্ট মেয়ে রুবাইদা নূর আলবীরা। কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন আর নাহিদা ইসলাম দম্পতির বড় মেয়ে সে। পড়তো মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, চারদিকে ধোঁয়া আর আগুন ছড়িয়ে পড়লে সবাই দিকবিদিক ছোটাছুটি করছিলেন। অনেকেই অজ্ঞান, কেউবা চিৎকার করছেন। ঠিক এমন সময় একজন সিনিয়র ভাইয়ের হাত ধরে আলবীরা বলে, ‘ভাইয়া, আমাকে একটু ধরে রাখো। আমি পড়ে যাচ্ছি।’ সে হাতই যেন তার জন্য হয়ে ওঠে জীবনরক্ষার হাত। আলবীরা সেই ভয়াল মুহূর্তে হিতাহিত জ্ঞান হারায়নি। ছোট বয়সেই বুঝে গিয়েছিল, এ হাতটা না ধরতে পারলে হয়তো আর জীবন ফিরে পাওয়া যাবে না।
পাশের অনেকেই গুরুতর আহত বা প্রাণ হারালেও আলবীরা বেঁচে গেছেন। তবে, আগুনে তার শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে। চেহারাতেও এসেছে গভীর ক্ষত। দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবশেষে স্থির হয়, ভর্তি করা হবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকেরা তার হাতে অস্ত্রোপচার করেন। মুখে প্লাস্টিক সার্জারিও করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, অস্ত্রোপচার সফল। আলবীরা এখন শঙ্কামুক্ত। সে এখন ৫২০ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।
আলবীরার বাবা জসিম উদ্দিন কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমার মেয়ে আজ বেঁচে আছে আল্লাহর অশেষ রহমতে। যে বুদ্ধি আর সাহস সে দেখিয়েছে, তাতে গর্ব হয়। এখন শুধু দোয়া চাই, সে যেন আগের মতো হাসতে পারে, স্কুলে যেতে পারে।’
পড়াশোনায় ভালো, নরম-নম্র স্বভাবের মেয়ে আলবীরার জন্য এখন প্রার্থনা করছেন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহপাঠীসহ কক্সবাজারের সাধারণ মানুষও। বাবার মুখেই শোনা গেল—‘আলবীরার জন্য দোয়া চাই। এই ভয়ানক সময়টা যেন আমরা পার করে উঠতে পারি।’
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর