
আওয়ামী লীগ আমলের বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা বাতিল করে ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যম নীতিমালা-২০২৫’ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরফলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইসির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যম নীতিমালা-২০২৫ জারি করে এমন বিষয় অন্তভূক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান,নতুন এ নীতিমালা জারি করার ফলে আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। যার ফলে আগে নীতিমালা অকার্যকর হয়েছে। এতে করে আগের নীতিমালা অনুযায়ী সরকার ভোটের বৈধতা পেতে ইচ্ছা করলে তার পছন্দের পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিতে পারতো তা আর পারবে না। কারণ এখানে পর্যবেক্ষক নির্ধারণে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহানুভূতি দেখাতে পারবে না। পর্যবেক্ষক কমিশনের অনুমোদন নিয়ে যে কোনো ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন, প্রিজাডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ভোটকক্ষেও যেতে পারবেন, থাকতে পারবেন ভোটগণনার সময়ও। তবে নাম, জাতীয়তা ও ফটো কমিশন থেকে সত্যায়ন ব্যতিত কোনো পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না। নিরপেক্ষতা বজায় না রাখলে বা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষককে সংসদীয় আসন বা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করার নির্দেশ দিতে পারবে; এইক্ষেত্রে কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচনি আচরণ বিধি কিংবা ভোট সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো আইন অনুযায়ী, পর্যবেক্ষকে কমিশন বা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য ৩০ দিনের সময় দিয়ে আবেদন আহ্বান করবে ইসি। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা সংগঠন হিসেবে পর্যবেক্ষক হতে হলে যে শর্ত পূরণ করতে হবে-ভোট দেখতে হলে সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আবেদনকারী সংস্থাকে নিজের দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অধীন নিবন্ধিত হতে হবে। নির্বাচনি আইনে সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং জালিয়াতি বা অসততা সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধে জড়িত থাকলে পর্যবেক্ষক আবেদন অনুমোদন করবে না ইসি।
বিদেশি পর্যব্কেষকদের আবেদনের সঙ্গে অভিজ্ঞতার সনদ, সিভি, মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্টের কপি ও ইসির নির্ধারিত ঘোষনার স্বাক্ষরিত কপি জমা দিতে হবে।
পর্যবেক্ষক সংস্থার প্যাডে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক কভার লেটারে পর্যবেক্ষকদের নাম ও জাতিয়তার তালিকা দিতে হবে। তারা চাইলে বাংলাদেশি দোভাষী রাখতে পারবেন, তার বিস্তারিত আবেদনের সময় উল্লেখ করতে হবে। দোভাষীদেরও যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন নিতে হবে।
বিদেশিরা আবেদনপত্র পূরণ করে ই-মেইল বা ফ্যাক্স করে পাঠাতে পারবেন। এছাড়া তারা চাইলে বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের দূতাবাসের মাধ্যমেও সরাসরি দাখিল করতে পারবেন আবেদন। কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন দিতে হবে। এক্ষেত্রে কমিশন কাউকে যোগ্য মনে করলে জননিরাপত্তা বিভাগকে যাচাই করে দিতে বলবে। এরপর বাছাই করে আবেদনকারীদের তালিকা কমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে ভিসা দেওয়ার জন্য। মন্ত্রণালয় কমিশনকে যথাযথ কারণের ব্যাখ্যা না দিয়ে কারো ভিসা প্রত্যাখান করতে পারবে না। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ইসি সচিবালয় পর্যবেক্ষক কার্ড ও গাড়ির স্টিকার সরবরাহ করবে। পর্যবেক্ষকরা ভোটের সাত দিন আগে থেকে আগের দিন পর্যন্ত তা সংগ্রহ করতে পারবেন, যা তাদের সব সময় বহন করতে হবে।
নীতিমালায় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে-
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভোট দেখার ৩০ দিনের মধ্যে ই-মেইল বা পত্রযোগে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। প্রতিবেদন নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা নির্বাচনি অনিয়ম চিহ্নিত করার ওপর জোর দিয়ে প্রতিবেদন দেবে সুপারিশসহ। সর্বোচ্চ মানদণ্ড ও সঠিকতার সহিত তারা নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক প্রতিবেদন দেবে। ভোট গণনার সময় একটি সংস্থা একজন পর্যবক্ষেককে রাখতে পারবে। কোনো পর্যবেক্ষক বেআইনি বা দুর্নীতি করতে পারবে না। কোনো দল বা ব্যক্তিকে সহায়তা বা বিরোধীতা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য যে নীতি প্রযোজ্য হবে সেগুলোও বিদেশিদের মানতে হবে। গণমাধ্যমে এমন কোনো বক্তব্য দিতে পারবে না যা নির্বাচনকে প্রভাবিত বা বিঘ্নিত করতে পারে। তারা যে কোনো সময় যে কোনো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দেওয়ার বাধ্যকবাধকতা ব্যতীত যতক্ষণ ইচ্ছা অবস্থান করতে পারবে। তবে তারা ভোটকক্ষে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না।
বিদেশি গণমাধ্যকেও মানতে হবে এ নীতিমালা
ভোটের খরব সংগ্রহ করতে হলে বিদেশি গণমাধ্যকেও আসতে হবে পর্যবেক্ষকদের মতো একই প্রক্রিয়ায়। তারা জে ক্যাটাগরির ভিসা পাবেন বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিধি অনুযায়ী। তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের জন্য একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন মিডিয়া সেন্টার খুলবে, যাতে তারা বার্তা পাঠাতে পারে। বিমানবন্দরে তাদের জন্য থাকবে হেল্প ডেস্ক, যেখানে তাদের কার্ড ও গাড়ির স্টিার দেওয়া হবে। বিদেশি গণমাধ্যমকে নিউজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশি গণমাধ্যম নীতিমালা মানতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর