
ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বছরের যে কোনো সময় ভোটার হালনাগাদ ও তালিকা প্রকাশ করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে ইসির প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই মর্মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩-এর দফা (জ)-তে উল্লিখিত "জানুয়ারি মাসের পহেলা তারিখ" শব্দগুলির পর "বা কমিশন কর্তৃক ঘোষিত অন্য কোন তারিখ" শব্দগুলি সন্নিবেশিত হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তরুণ ভোটারদের ভোট গণনার বাইরে রেখে নির্বাচন আয়োজন রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষত যেহেতু এই শ্রেণির একটি বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। এ প্রেক্ষাপটে ইসি ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল, যাতে বছরের যে কোনো সময় খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা কমিশন হাতে পায়। এই আইন সংশোধনের ফলে এখন থেকে প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি বছরের যে কোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পেল কমিশন।
আগের বিধান অনুযায়ী, পহেলা জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর হতো, তারাই ভোটার তালিকায় যুক্ত হতেন। কিন্তু এরপরের পহেলা জানুয়ারি আসার আগে যদি কারো বয়স ১৮ বছর হয় এবং এরমধ্যেই যদি কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তারা আর ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারতেন না। অর্থাৎ, মাঝের এক বছর সময়ে যারা ১৮ পূর্ণ করতেন, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতেন না। কিন্তু সংশোধিত এই আইনে এখন থেকে কমিশনই নির্ধারণ করবে যে কোন তারিখ পর্যন্ত যোগ্য নাগরিকদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করা যাবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, কম্পিউটার ডাটাবেজে সংরক্ষিত বিদ্যমান সকল ভোটার তালিকা, প্রতি বছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত বা তফসিল ঘোষণার পূর্বে ধারা ৩-এর দফা (জ)-এর অধীন ঘোষিত সময়কালের মধ্যে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে হালনাগাদ করা হবে। আগের বিধান অনুযায়ী, ২ মার্চের আগে বা পরে হালনাগাদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা যেত না। আইনে সংশোধনের ফলে কমিশন যে কোনো সময় হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারবে।
অন্যদিকে অধ্যাদেশের ফলে বিদ্যমান নির্বাচনী এলাকা বা ভোটার এলাকা থেকে অন্য নির্বাচনী এলাকায় বা ভোটার এলাকায় আবাসস্থল পরিবর্তন করা হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম পূর্বের এলাকার ভোটার তালিকা থেকে কেটে স্থানান্তরিত এলাকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ইতিমধ্যে গণমাধ্যমকে আইন সংশোধনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছেন, আইন অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে আমরা চেয়েছি যে বছরের মাঝামাঝিও যদি কেউ ভোটার হয়, যেন তার তালিকা প্রকাশ করা যায়।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, "কোন সময় পর্যন্ত ভোটার অন্তর্ভুক্তি করা যাবে এবং কারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন—এই বিষয়ে আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছি। কমিশন যৌক্তিক বিবেচনায় সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সময় নির্ধারণ করবে। এই যৌক্তিকতা কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্বাচনী তফসিল বিবেচনায় রেখেই তা করা হবে।"
জানা যায়, চলতি বছরে বাড়ি বাড়ি ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে মোট ৬৩ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যাদের মধ্যে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে, এমন ৪৪ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ পূর্ণ হবে, এমন প্রায় ২০ লাখ নাগরিকের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। আইনে সংশোধন আসায় এদের অনেকের ক্ষেত্রমতে সকলেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।
সর্বশেষ খবর