
উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে উত্তাল সাগর আর অস্বাভাবিক জোয়ারে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন রুট- টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ।
শুক্রবার সকাল থেকেই টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত আড়াই কিলোমিটার সড়কের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অন্তত ১০টি পয়েন্টে সড়কের অংশবিশেষ ভেঙে গেছে। এর আগেও ২০২৩ ও ২০২৫ সালের মে মাসে একই এলাকায় বড় ধরনের ভাঙনের ঘটনা ঘটে।
ভাঙন ঠেকাতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পক্ষ থেকে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় জিও ব্যাগ ও বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হলেও, তা সাগরের জলোচ্ছ্বাসের কাছে টিকছে না। শুক্রবার সকালের জোয়ারের সময় শক্তিশালী ঢেউ সেই জিও ব্যাগ ডিঙিয়ে ফসলি জমি পর্যন্ত লবণাক্ত পানি পৌঁছে দেয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি এখন সুস্পষ্ট নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, নিম্নচাপটি শুক্রবার সকাল ৬টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল এবং এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তিনি আরও জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ১-৩ ফুট উচ্চতার অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতে সাগর উত্তাল ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সাবরাং এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, মেরিন ড্রাইভের একাধিক জায়গায় ভাঙনের কারণে আমরা আতঙ্কে আছি। চাষযোগ্য এক-দেড় হাজার একরের বেশি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে, যেগুলো প্লাবনের আশঙ্কায় রয়েছে।
একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা থেকে ফতেয়াআলী পাড়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আবারও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগের ভাঙনের সময় সেনাবাহিনী ইট-বালির বস্তা ফেলে মেরামতের চেষ্টা করেছিল, তবে এবার ঢেউ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সাবরাং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ ছিদ্দিক জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ফোন পেয়ে বিষয়টি চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত দুই বছরের ব্যবধানে টানা তিন দফায় ভাঙনের কবলে পড়েছে মেরিন ড্রাইভের এই অংশ। প্রতিবারই স্থানীয়রা দাবি করেছেন, সাময়িক জিও ব্যাগ বা বালির বস্তা দিয়ে নয়, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বাঁধই একমাত্র সমাধান হতে পারে।
এদিকে, সতর্ক সংকেতের পাশাপাশি পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করেছে প্রশাসন। কক্সবাজার সৈকত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর