আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে তরুণ ও নতুন নেতাদের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট-পরবর্তী অনুকূল পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে শীর্ষ নেতাদের সন্তানদেরও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ ও ব্যানার-পোস্টারে তাঁরা সক্রিয় রয়েছেন। সম্ভাব্য এসব তরুণ প্রার্থীর অনেকে এলাকায় মানুষের নজর কেড়েছেন বলে জানা গেছে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত দিলে নতুন মুখ হিসেবে এই তরুণদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে জায়গা করে নিতে পারেন। আর চট্টগ্রামে বিএনপির তরুণ রাজনীতিবিদরা অনেকটাই বাবার দেখানো পথে চলতে শুরু করেছেন। বর্তমানে রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। কেন্দ্র ও জেলা কমিটির নেতৃত্বেও আছেন তাঁদের কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনীতিতে উত্তরাধিকার সংস্কৃতি পুরনো। তবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সক্রিয় উত্তরাধিকারীরা তৃণমূলের রাজনীতি করে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। দলের ক্লান্তিলগ্নে বিএনপির রাজনীতি করে ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছিরের সন্তান মীর হেলাল, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দুই ছেলে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। ৫ আগস্টের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
দলটির বিভিন্ন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে এখন ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। বাবা মীর নাছির উদ্দিনের (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) হাত ধরে রাজনীতিতে এলেও তাঁর উত্থান হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে সাংগঠনিক দক্ষতায় পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ যুক্ত আছেন বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনে।
চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় রাজনীতিতে যে কয়েকজন তরুণ আছেন তার মধ্যে সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছে মীর হেলালের নাম। ২০১৫ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির পর আলোচনায় আছেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। বাবার ফাঁসির পর রাজনীতিতে নেমেই আলোচনার কেন্দ্রে আসেন তিনি। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ঘোষিত বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে সদস্য হওয়ার পর পুরোদমে সক্রিয় মাঠের রাজনীতিতে। অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম ইসরাফিল খসরু।
বিএনপির গবেষণা সেলে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে কাজ করেছেন। আমীর খসরু জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকলেও সপ্তাহে দু-তিন দিন চট্টগ্রামে থেকে নেতা-কর্মীদের খবর নিয়েছেন ইসরাফিল। বর্তমান বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল চট্টগ্রামের তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত নারী নেত্রী শাকিলা ফারজানা। বাবার আদর্শ ধারণ করে শাকিলা আইনি সেবা দিয়ে বিগত সময়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন। বাবার রাজনৈতিক পদ ধরে রাউজানে বেশ সক্রিয় সামির কাদের চৌধুরী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। তরুণদের মধ্যে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
একইভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন জহিরুল ইসলাম আলমগীর ও মিশকাতুল ইসলাম পাপ্পা। আলমগীর বাবার জীবদ্দশা থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়, ছিলেন যুবদল ও বিএনপির নানা পদে। বর্তমানে জেলা বিএনপির সদস্য তিনি।
ছোট ভাই পাপ্পাও সক্রিয় জেলা বিএনপির রাজনীতিতে। এদিকে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেন সাঈদ আল নোমান। বাবার সঙ্গে নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইসরাফিল খসরু বলেন, "আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। জনমানুষের কাছাকাছি থাকা, মানুষের সেবা করা এটা পারিবারিক শিক্ষা। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এখন আলোচনা করতে চাচ্ছি না।"
সাঈদ আল নোমান বলেন, "নিজের অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের সেবা করার নাম রাজনীতি। স্বনির্ভর শিক্ষিত বাংলাদেশ রাজনীতির পূর্বশর্ত। মনোনয়ন পেলে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে।"
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, "রাজনীতিতে তরুণদের আগমন ভালো দিক। আমাদের বাবারা রাজনীতি করেছেন গণমানুষের জন্য। তাঁদের কাছ থেকে শৈশবকাল থেকে জনসেবা, দেশসেবার ব্রত দেখেছি। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তবে উত্তরাধিকার হিসেবে রাজনীতিতে এলেও বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করে আজকের পর্যায়ে এসেছি। বিগত সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি।"
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর