
গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পুকুরে ডুবে নিহত হওয়া যুবক সিজু মিয়ার মৃত্যু নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সিজুর স্বজন ও স্থানীয় জনগণ। এ কর্মসূচিতে গাইবান্ধা জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
বিক্ষোভকারীরা সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলমকে অভিযুক্ত করে অবিলম্বে তার অপসারণ ও গ্রেফতার দাবি করেন। বক্তারা বলেন, “সিজুর মৃত্যু পানিতে ডুবে নয়, এটি ঠান্ডা মাথায় করা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সিজু ছিলেন সুস্থ-সবল ও স্বাভাবিক যুবক। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনার রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া মানববন্ধন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিক্ষোভে রূপ নেয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তা খালি করার অনুরোধ করলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
পরে, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশনস্) শরিফুল আলম বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনকারীরা পুলিশ সুপারের সরাসরি উপস্থিতি ও জবাবদিহির দাবি তোলেন। একপর্যায়ে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা আন্দোলনকারীদের সামনে উপস্থিত হয়ে নিহত সিজুর মা ও নিকট আত্মীয়দের নিজ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে কথা বলেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত সিজুর মা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।
এর আগে, শনিবার জোহরের নামাজের পর গাইবান্ধার গিদারী গ্রামে সিজুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পূর্বে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল করিম বক্তব্যে দাবি করেন, “সিজু ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন বলেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।” তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে সাঘাটা থানার পাশের সাঘাটা হাইস্কুলের পুকুর থেকে সিজুর মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর থেকে আগত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
পুলিশের ভাষ্য মতে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মোবাইল ফোন হারানোর বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে সাঘাটা থানায় যান সিজু। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তাকে জিডি করতে দেওয়া হয়নি এবং ৫০ টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রায় এক ঘণ্টা পর তিনি ফের থানায় প্রবেশ করে ছুরি নিয়ে দায়িত্বরত কনস্টেবল সেরাজুলের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং এএসআই মহসিন আলীকে মাথা ও হাতে ছুরিকাঘাত করেন বলে পুলিশের অভিযোগ।
এরপর তিনি থানার পেছনের পুকুরে ঝাঁপ দেন এবং গভীরতার কারণে রাতেই উদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় পরদিন সকালে ডুবুরি এনে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলম সাংবাদিকদের বলেন, “সিজুর মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ ছিল। তবে তার হামলার পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।”
এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর