
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে গত ২৮ জুলাই, সোমবার, গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত এনওয়াইপিডি (নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ) কর্মকর্তার নাম প্রকাশ হয়েছে। নিহত পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দিদারুল ইসলাম (৩৬)। তিনি নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
নিহত দিদারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সদর উপজেলায়। তাঁর নিহত হওয়ার খবরে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কুলাউড়া পৌর শহরের উত্তর মাগুরা এলাকায় ‘নাঈমা নীড়’ নামে দোতলা বাড়ি রয়েছে দিদারুলের। প্রতিবেশী তাহেরা বেগম (৪৭) সম্পর্কে দিদারুলদের ফুফু। তিনিই বাড়িটি দেখাশোনা করেন। দিদারুলের অকালমৃত্যুতে তাঁদের পরিবারেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তাহেরা বলছিলেন, ‘রতনরা (দিদারুল) এক ভাই আর দুই বোন। সবাই নিউইয়র্ক থাকইন। বছরখানেক আগে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী আর দুই সন্তানরে নিয়া আইয়া বেড়াইয়া গেল। ছুটি বেশি না পাওয়ায় সে (রতন) বেশি দিন থাকতে পারেনি। এক মাসের মতো ছিল। অন্যরা দুই মাস বেড়াইয়া যান। কত হাসিখুশি ছিল ছেলেটা (দিদারুল)। আপন ফুফুর চেয়ে বেশি ভালোবাসত। সকালে নিউইয়র্ক থাকি ফোন পাইলাম, ছেলেটা নাই। শুনিয়া বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ভালা ছেলেটা সবাইরে কান্দাইয়া দুনিয়া থাকি বিদায় নিল।’
তিনি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে ট্রাফিক বিভাগ থেকে নিয়মিত ইউনিটে বদলি করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি ভবনে সিকিউরিটি ডিটেইলে (অফ-ডিউটি, পেইড ডিউটি) দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেখানেই বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণ হারান।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ এক সংবাদ সম্মেলনে দিদারুল ইসলামকে একজন সাহসী ও দায়িত্বপরায়ণ অফিসার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি সেই কাজটাই করছিলেন যা একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে তাঁর করার কথা। নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যদের রক্ষা করা।’
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ২৭ বছর বয়সী ডেভন তামুরা নামের এক বন্দুকধারী রাইফেল নিয়ে ওই ভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে এনওয়াইপিডি কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। পরে হামলাকারী নিজেও আত্মঘাতী হন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দিদারুল ইসলামই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর পিতা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাঁর মৃত্যুতে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং স্থানীয় কমিউনিটি নেতারা দিদারুল ইসলামের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন সৎ, ধর্মপ্রাণ ও কমিউনিটিবান্ধব মানুষ। এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হারানো আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।’
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর