
"তুই সাপ ধরবের ক্যা গেলু বাপ— ও আব্বা, ও আব্বা!" বিষাক্ত সাপের কামড়ে বাবাকে হারিয়ে এমনি প্রলাপ করছে মৃত সাপুড়ে বয়েজ উদ্দিনের মেয়ে পারভীন। পারভীনের এমন কাতর প্রলাপে নির্বাক চোখে জল এসেছে নিকটাত্মীয়সহ দেখতে আসা অনেকের। ফলে যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো মহল্লায়। সাপ ধরতে গিয়ে সাপের ছোবলে প্রাণ হারানো সাপুড়ে বয়েজ উদ্দিন উপজেলার কচাকাটা থানার বল্লভের ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ডাক্তার পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কালীগঞ্জের কাপালীপাড়ায় ইমরান আলীর বাড়ির রান্নাঘরে গর্তে থাকা একটি বিষাক্ত সাপ দেখতে পায় পরিবারের লোকজন। পরে সাপটি ধরতে স্থানীয় সাপুড়ে বয়েজ উদ্দিনকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সাপুড়ে ওই বাড়িতে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় বিষধর সাপটি ধরে কিছুক্ষণ পর সুকৌশলে সাপটিকে বস্তায় ভরানোর সময় পরপর দুবার ডান হাতে ছোবল মারে সাপটি। এসময় তিনি বিষক্রিয়ায় মাটিতে ঢলে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয়রা দ্রুত চিকিৎসার জন্য অটোরিকশায় করে স্থানীয় গাবতলা বাজারে নিয়ে আসেন। এ অবস্থায় বিষক্রিয়ায় সাপুড়ে বয়েজ উদ্দিনের অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে মাইক্রোবাসে করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বয়েজ উদ্দিনের ভাগ্নে সিরাজুল ইসলাম জানান, "বয়েজ উদ্দিন আমার মামা হন। তিনি পেশায় সেলো মেকানিক, তবে তিনি দীর্ঘদিন থেকে সাপ ধরেন। আজ সকালে কমেদপুর কাপালি পাড়া থেকে লোক এসে সাপ ধরার জন্য ডেকে নিয়ে যান। সেখানকার ইমরান আলীর বাড়ির রান্নাঘর থেকে একটি সাপ ধরেন। বস্তায় ঢোকানোর সময় সাপ ছোবল মারে। পরে খবর পেয়ে আমরা তাকে হাসপাতালে নিই।" ইমরান আলী জানান, "বাড়ির রান্নাঘরে অনেকদিন থেকে সাপের উপদ্রব ছিল। আজকে বয়েজ উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে যাই। রান্নাঘরের একটি ইঁদুরের গর্ত থেকে সাপের তিনটি বাচ্চাসহ সাপটিকে ধরেন তিনি। পরে বস্তায় ঢোকানোর সময় সাপটি উল্টে তাঁর হাতে ছোবল মারে। অনেক ক্ষণ পর বিষক্রিয়া শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।" ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম আবু সায়েম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, "তাকে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।"
সর্বশেষ খবর