
চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুপক্ষে সংঘর্ষের ঘটনার পরপরই উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, শিগগিরই নতুন কমিটি গঠন করা হবে। বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন গোলাম আকবর খোন্দকার। একইসাথে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দলীয় সব পদ স্থগিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, গিয়াস কাদের চৌধুরী সম্প্রতি নিজ এলাকায় দলের অভ্যন্তরে হামলাসহ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। একাধিকবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি উসকানিমূলক ভূমিকা রেখে এলাকায় অরাজক রাজনীতি চালিয়ে গেছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ায় গঠনতান্ত্রিক বিধান অনুসারে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ স্থগিত করা হয়েছে।
চিঠিটি দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের কাছে অনুলিপি আকারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় বিএনপির দুপক্ষে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় খোন্দকারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতির কবর জিয়ারত করতে যান গোলাম আকবর খন্দকার। এদিন আগামী ৯ আগস্ট সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের। গোলাম আকবর তার বহর নিয়ে সত্তারহাট এলাকায় পৌঁছালে সেখানে অবস্থান নেওয়া গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের মুখোমুখি হন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ঘটনার পরপরই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনাস্থলের কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গোলাম আকবর খোন্দকারের গলায় কাটা দাগ, রক্ত ঝরছে। নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। একটি পাজেরো জিপ ভাঙচুরে চুরমার হয়ে গেছে। সড়কে পড়ে আছে পুড়িয়ে দেওয়া কয়েকটি মোটরসাইকেল।
গোলাম আকবর খোন্দকার জানান, আমি আগেই খবর পেয়েছিলাম, তারা হামলা করবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি। পরে একটি নোট পেলাম, গিয়াস উদ্দিনের নির্দেশে আজ সারাদিন সত্তরঘাট থেকে মুন্সিঘাটা পর্যন্ত মিছিল করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে তারা আমাকে কনফার্ম করে, ‘কোনো অসুবিধা নেই, আমরা আছি’। তারপর আমরা এসেছি। কিন্তু আমরা যখন সত্তরঘাট ব্রিজ ক্রস করলাম তখন ৫০-৬০ জন লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করল। লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করলো।
উল্লেখ্য, গোলাম আকবর খোন্দকার এবং গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী উভয়ের বাড়ি রাউজান উপজেলায়। উভয়ে রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য। রাউজানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এ দুই নেতার আলাদা বলয়ে বিভক্ত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রাউজানে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে গণমাধ্যমের ভাষ্য।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর