• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১২ সেকেন্ড পূর্বে
এম. এ. আহমদ আজাদ
হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি (সিলেট বিভাগ)
প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০২ বিকাল

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাচনা বাজারের হাসপাতাল চালুর দাবি

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত জামালগঞ্জ উপজেলার প্রথম স্বাস্থ্যসেবাদানকারী বর্তমানে পরিত্যক্ত পুরোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিন ধরে চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন উপজেলাবাসী, বিশেষত উপজেলার সাচনা বাজারসহ সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের তিনটি ইউনিয়নের জনগণ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সচেতন মহল। বছরের পর বছর দাবিটি উপেক্ষা করে চলেছে সব সরকার। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। চরম অসন্তোষ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে অযত্ন ও অবহেলায় পুরো স্থাপনাটি এখন ভূতুড়ে অবস্থায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন সময়ে ফেলা বাজারের আবর্জনায় এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এটি।

এছাড়াও, পুরোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বারবার অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় অবৈধ দখলমুক্ত করে সীমানা প্রাচীর দিয়েছিল সরকার। হাসপাতালটির পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনার ও বীরবিক্রম শহীদ সিরাজুল ইসলামের স্মৃতিফলক। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই হাসপাতালটি একসময় সংস্কারের পরও বেশ কয়েক বছর ভালোই চিকিৎসাসেবা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে ও বিভিন্ন পুরোনো সংবাদপত্র ঘেঁটে জানা যায়, সাচনা বাজারের পুরোনো এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরো উপজেলায় তখন এই একটি চিকিৎসাকেন্দ্র ছিল। ১৯৪০ সালে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় জামালগঞ্জ থানা। তৎকালীন সময়ে ভাসমান জল-থানা ছিল এই অঞ্চলে। প্রথমে হাসপাতালটির নাম রাখা হয় 'সাচনা থানা ডিসপেনসারি'। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে নিশ্চিত হওয়া যায়, ১৯৪০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ব্রিটিশের আসাম প্রাদেশিক সরকার এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে। হাসপাতালটি নির্মাণের পর থেকেই জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুরসহ হাওরাঞ্চলের আশপাশের কয়েকটি থানার লোকজন চিকিৎসাসেবা নিতো তৎকালীন সময়ে।

পরে ১৯৭৭ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সুরমা নদীর দক্ষিণপাড় তৎকালীন জামালগঞ্জ থানা হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ১৯৮২ সালে সুরমার দক্ষিণ পাড়েই জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে সুরমার উত্তর পাড়ের তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের কাছ থেকে হাসপাতালটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে দাবি ওঠে। কারণ জামালগঞ্জ উত্তর, সাচনা বাজার ও বেহেলীসহ তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিতে সুরমা নদী পার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা মুমূর্ষু ও গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসবের সময় জরুরি মুহূর্তে সঠিক সময়ে নদী পারাপার করা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। জানা যায়, ২০১৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সুপারিশে জামালগঞ্জ উপজেলার সাবেক প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ ১০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল চালুর দাবিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু আশ্বাসের বেড়াজালে পড়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি উপজেলার সাচনাবাজার পুরাতন হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে জোর দাবি জানাতে একাট্টা হয়েছেন সচেতন নাগরিক ও জনপ্রতিনিধিরা। সাচনাবাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম তিন ইউনিয়নের সেবাপ্রত্যাশী সচেতন নাগরিকদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনোভাবেই টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, চলতি মাসের ৯ তারিখে হাসপাতালটি পুনরায় সংস্কার ও স্বাস্থ্যসেবা চালুর ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন ও ১৩ তারিখে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেন মো. খুরশিদ আলম। আবেদনে তিনি হাসপাতালটি পুনরায় সংস্কার ও চালুর ব্যাপারে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

এ ব্যাপারে সাচনা বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম আহমদ জানান, "আমরা ছোটবেলায় এই হাসপাতালটিকে চিকিৎসাসেবা দিতে দেখেছি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেবা ও জৌলুস হারিয়েছে এই হাসপাতালটি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি এটি পুনরায় চালুর জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই সরকার এদিকে নজর দিচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত এই হাসপাতালটি চালু হোক।"

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঈন উদ্দিন আলমগীর বলেন, "চিকিৎসার সুবিধার্থে পুরোনো হাসপাতালটি আবার চালু হওয়া দরকার। আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে গত বছর সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মহোদয় জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এলে বিষয়টি স্যারকে অবগত করলে তিনি চালুর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন।"

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, "আমি দেখেছি জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারের পুরোনো হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এটি চালু করা আমিও মনে করি দরকার। তবে চালু করতে হলে নতুন করে স্থাপনা তৈরি করতে হবে। এছাড়া জনবল তো লাগবেই। এটি চালুর ব্যাপারে আগে প্রস্তাবনা পাঠানো আছে। প্রয়োজনে আমরা আবারও প্রস্তাব পাঠাবো। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় যাক আমরাও চাই।"

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, "হাসপাতালটি চালুর ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। যেহেতু হাসপাতালটির আশপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, তাই হাসপাতালটি যদি চালু হয় জায়গাটি কাজে লাগবে এবং সাচনাবাজারের আশপাশের লোকজন সহজেই স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবে।"

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]