• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৪ সেকেন্ড পূর্বে
আরিফ হোসেন
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৫৫ রাত

`আল্লাহ ঠেকাইছে, অহন যামু কই'

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

'‘আল্লাহ ঠেকাইছে, অহন যামু কই।”ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের খেজুরগাছিয়ায় মেঘনার ভাঙ্গনকবলিত বেড়িবাঁধের ঢালে ঝুঁপড়িতে বসতিগড়া ইয়াছনুর বেগম (৪৫) প্লাবনের ঝুঁকিতে অবস্থান করে ভয়-আতংকে এমন অসহায় উচ্চারণ করেছেন। ইয়াছনুরের মতো হাজারীগঞ্জ এবং জাহানপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ যে কোন সময় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক দলের দু’টি গ্রুপের টানাপোড়েনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ ঝুলে থাকায় গোটা এলাকার হাজার হাজার মানুষ এমন ঝুঁকিতে পরেছেন বলে স্থানীয় ভূক্তভোগীরা ও স্থানীয় বাসিন্ধারা অভিযোগ করেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সরেজমিনে পরিদর্শন কালে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, খেজুরগাছিয়া এলাকায় প্রায় আড়াইশ মিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ভাঙ্গন থেকে এই বাঁধ রক্ষার জন্য গত দুই মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ওই বরাদ্দের টাকায় আড়াইশ মিটার এলাকাজুড়ে বাঁধটির ওপরের অংশ জিওব্যাগের কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের টাকা দিয়ে জিওব্যাগ ভর্তি বালি ফেলে ভাঙ্গনের লাগাম টেনে ধরার কথা ছিল। কিন্ত স্থানীয় রাজনৈতিক একটি দলের দু’গ্রুপের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট টানাপোড়েনের কারণে ভাঙ্গন এলাকায় জিওব্যাগ ভর্তি বালি আর ফেলা হয়নি। ফলে যেকোন সময় বাঁধটি ধ্বসে গিয়ে বাঁধসংলগ্ন এলাকার বাড়িঘর পানির তোপে ভেসে যাওয়ার মতো শঙ্কা তৈরী হয়েছে। বিশেষ করে গত ২/৩দিন ধরে মেঘনায় জোয়ারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভয়-আতংক বাঁধসংলগ্ন বসতিসহ হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর ঝুঁপড়ি ঘরে প্রতিবন্ধীস্বামী ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েকে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাছনুর বেগমসহ বাধের পাড়ের প্রায় ২০০ পরিবারের।

তাছনুর বেগম বলেছেন-‘জোয়ারের টানে যেকোন সময় বাঁধসহ ভেসে যেতে পারেন। তবুও এখানেই থাকতে হবে। আর কোথাও যে থাকার জায়গা নেই।’ আমাগো কেন জমি নাই, শ্বশুর এখানেই আমারে বউ করে আনছেন। এহন ‘‘আল্লাহ ঠেকাইছে। অহন যামু কই। এমন বাতাস আর জোয়ার হইলে যহন তহন আমাগো ঝুঁপড়ি ঘরটি নদীত তলাইয়া যাইবো। হেয়ার পরও বাধ্য হইয়া পঙ্গু স্বামী ও দুইডা পোলা মাইয়া নিয়ে বান্দের পাড়ের ঘরো থাহি।

৩৫ বছর ধরে বাঁধের ওপর বসবাস করা জেলে নুরে আলম বলেছেন-‘বাঁধের অর্ধেক ভেঙ্গে গেছে। যে কোন সময় পুরো বাঁধ ভেসে যেতে পারে। তারপরও এখানেই তাকে থাকতে হচ্ছে। বাঁধটি মেরামত করা হলে এমন ভয় থাকতো না।’ রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বাতাসের শব্দ পাইলেই আতকে উঠেন তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এই বুঝি বেঁড়ি ভেঙ্গে ঘর চাপা দেয়।

বাঁধের ওপরের বাসিন্দা কৃষক বশির উল্যাহ বলেছেন-‘বাঁধ ভেসে গেলে আশপাশের বাড়িঘর স্রোতের তোপে ভেসে যাবে। পাশাপাশি হাজারীগঞ্জ এবং জাহানপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরবে। রাস্তা-ঘাট এবং ফসলের মাঠ পানির নিচে চলে যাবে। সময় মতো বাঁধটি মেরামত করতে পারলে এই বিপদ এড়ানো যেতো। কিন্ত স্থানীয় রাজনৈতিক দলের দু’গ্রুপের টানাপোড়ের কারণে টাকা বরাদ্দ করার পরও বাঁধটি মেরামত কাজ করা হয়নি ।

খেজুরগাছিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন-‘বাঁধের ওপর বাজার এবং মাছঘাট। এখানে শতাধিক মৎস্য আড়ৎসহ তিন শতাধিক দোকান রয়েছে। এখন পুরো বাজার এবং ঘাট ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন-বাঁধ মেরামতের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হলেও আড়াইশ মিটার এলাকা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া ছাড়া প্রকৃত মেরামত কাজ করা হয়নি। প্রভাবশালীরা বারাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা করার গোটা এলাকা এখন প্লাবন ঝুঁকিতে আছে।

ঠিকাদার উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল জানান, প্রয়োজনীয় জিওব্যাগ ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় মজুত করা হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের কারনে কাজ করা যাচ্ছেনা। তাই কাজের ধীর গতি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে। এখানে কোন বাধা বিপত্তি নেই।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া জানান, বিএনপির দু’পক্ষের টানাটানিতে কাজ বন্ধ বিষয়টি সঠিক নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। কাকে দিয়েছেন তা আমার জানা নাই। সরকারী জরুরী বরাদ্দে কাজ দ্রুত সংস্কার করে জনগনের জানমাল রক্ষা করবে। এখানে বিএনপি কোন দায় নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদদৌলা জানান, বাঁধের জরুরী মেরামত কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের কারনে দ্রুততার সাথে মেরামত কাজ করা যায়নি। এখন জিও ব্যাগ ভর্তি বালি দিয়ে ভাঙ্গনরোধের মাধ্যমে মেরামত কাজ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি জানান, জনগনের জান মাল রক্ষায় ভাঙ্গন কবলিত বাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য বলা হয়েছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]