
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানী ঢাকার উত্তাল রাজপথে নিঃস্ব হয়েছিল ভোলার বহু পরিবার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় কর্মরত ভোলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। বুলেট-বোমার রক্তাক্ত সেই রাজপথে শহীদ হন জেলার ৪৭ জন। ইতিহাসের রক্তপাতময় সেই দিনগুলোর এক বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি স্বজনহারাদের।
তথ্যমতে, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা ২১ দিনের আন্দোলনের মাত্র তিন দিনেই শহীদ হন ভোলার ৩৩ জন। ১৯ জুলাই প্রাণ হারান ১৩ জন, ৪ আগস্ট ১১ জন এবং ৫ আগস্ট শহীদ হন ৯ জন।
শহীদদের মধ্যে কেউ ছিলেন ছাত্র, কেউ রিকশাচালক, কেউ দোকান কর্মচারী, আবার কেউবা ছিলেন মসজিদের ইমাম কিংবা গার্মেন্টস কর্মী। সবাই ছিলেন সমাজের নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। অধিকাংশ শহীদকে ভোলার নিজ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঢাকায় নিহতদের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার ১২ জন, দৌলতখানের ৩ জন, তজুমদ্দিনের ১ জন, লালমোহনের ১১ জন, চরফ্যাশনের ১২ জন এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৯ জন শহীদ হন।
দৌলতখানের শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগম বলেন, “আমার স্বামী নিউমার্কেটে পাপসের ব্যবসা করতেন। ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আমাদের আট মাস বয়সী সন্তান বাবার মুখ পর্যন্ত দেখতে পায়নি।”
ভোলা সদরের শহীদ রনির মা মাইনুর বেগম কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, “ওর কামাইর টাকা আমার হাতে দিতো। এখন কেউ খাওয়ায় না, আমার পোলা আর ফিরবে না, বিচার চাই।”
বোরহানউদ্দিনের শহীদ নাহিদুলের মা বিবি ফাতেমা বেগম বলেন, “আমার ছেলে চাকরি করত, পড়াশোনাও চালিয়ে যেত। ওর ভবিষ্যৎ ছিল। আজ বুক ফাঁকা।”
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, “জুলাই আন্দোলনে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে ভোলার সন্তানরা। শহীদ পরিবারগুলোর কষ্ট কখনোই পূরণ করা সম্ভব নয়, তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।”
ভোলার আকাশে আজও যেন ভেসে বেড়ায় সেই গগনবিদারী আর্তনাদ। এ কান্না শুধু ভোলার নয়, এ কান্না গোটা জাতির।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর