
শিল্পাঞ্চল সাভারের বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহনে লক্ষাধিক মানুষের চলাচল। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই নাজুক অবস্থায় থাকে। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই সড়কটির কয়েক কিলোমিটার অংশ পানিতে তলিয়ে থাকে বছরের অর্ধেক সময়ধরে।
পানিতে তলিয়ে থাকা সমান্তরাল সড়কে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণও হারান অনেকেই। আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় ভোগান্তি যেন এই পথের চলাচলকারীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে এই সড়ক ব্যবহারকারীরা আগামী বর্ষের আগেই আলোর মুখ দেখবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের অবস্থা এখন নাজেহাল। ইপিজেড থেকে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড ও সেখান থেকে জিরাবো পর্যন্ত কাদা ও খানাখন্দে ভরা। খন্দকার মসজিদ থেকে শিমুলতলা, এরপর জামগড়া চৌরাস্তা থেকে ছয়তলা এলাকা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়কে পানি জমে আছে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে গভীর গর্তগুলোতে কোমর সমান পানি জমে। অনেকসময় এসব গর্তে গাড়ি আটকে কিংবা উল্টে গিয়ে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। গত ১৬ই এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের লিয়া রেস্টুরেন্টের প্রধান ফটকের সামনে ড্রেনের গর্তে পড়ে যাত্রীবাহী একটি লেগুনায় থাকা দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এদূর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
স্থানীয় জামগড়া পানি নিষ্কাশন ও ড্রেন-রাস্তা সংস্কার কমিটির উদ্যোগে চৌরাস্তা থেকে বাগবাড়ি রাস্তা ও ড্রেনে জলাবদ্ধতা নিরাশনে কাজ করা হচ্ছে। তাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন শুধু রাস্তাঘাট নয়,বরং পুরো এলাকার স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, আশুলিয়ায় সরকারি নয়নজুলি খালটি ফ্যান্টাসি কিংডম সহ প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে এর কারণে সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটু পানি হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ড্রেনে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ড্রেন বন্ধ হওয়ার কারণে আমরা স্থানীয় বাসিন্দা এলাকাবাসী সবাই মিলে ড্রেন সচল করার লক্ষ্যে কাজ করছি জনস্বার্থে।
জামগড়া চৌরাস্তার পাশের এক দোকানদার জাকির তিনি বলেন,অল্প বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে পানি উপচে আশপাশের দোকানে উঠে পড়ে। এতে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের দুর্ভোগ কবে শেষ হবে তা কারও জানা নেই। বছরের পর বছর ধরে সড়কটিতে পানি জমে থাকলেও এগুলো দেখার কেউ নেই। বর্ষার সময় এই সড়ক একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।
ব্যস্ততম এই সড়কের পাশে দিয়ে গড়ে উঠেছে একাধিক পোশাক কারখানা। লাখো শ্রমিকের বসবাস ও চলাচলের একমাত্র রাস্তা বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক। পোশাক শ্রমিকরা জানান,এই এলাকার রাস্তাঘাটগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। এখন বর্ষাকাল ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেলে ভিজে কারখানায় যেতে হয়। পানিতে ডুবে থাকা ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। আর যানজটের দুর্ভোগের তো শেষ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যানজট লেগেই থাকে। আবার শুকনো মৌসুমে অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে আমাদের শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়। আর
এই সড়কে লোকাল বাস আশুলিয়া স্মার্ট পরিবহন চালকেরা বলছেন, ১২ মাসই টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে দিয়ে আমাদের রীতিমতো বিপদে পড়ে গাড়ি চালাতে হয়। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি জমে থাকায় এই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। আধাঘণ্টার সড়ক অনেক সময় দুই ঘণ্টাতেও পৌঁছানো যায় না।
বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা জানান,বৃষ্টির কারণে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক নিত্যদিনের ভোগান্তির সঙ্গী। সকাল-সন্ধ্যা যানজট লেগেই থাকে। বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান পাইলিংয়ের কাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে গেছে। এটাও যানজট ও ভোগান্তির কারণ।
এব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) গোলাম সারোয়ার বলেন,"বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের অবস্থা একদম নাজেহাল।প্রতিনিয়তই এই সড়ক পরিদর্শনে যায়।এই রাস্তার বড় বড় গর্ত খানাখন্দভরা।এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লোকেরা এসে কিছু রাবিস দিয়ে গর্ত পূরণ করে আবার বৃষ্টি এসে পূনরায় গর্তে পরিনত হয়।একটা মানুষ হেটে যত তারাতাড়ি পার হবে ঐ রাস্তা পার হবে তার থেকে বেশি সময় লাগে গাড়ি দিয়ে যেতে।
আমরা একাধিকবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি,তাদের নাকি একটা বাজেট পাশ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে পুরো রাস্তার কার্পেটিং করবে। সড়কটির অবস্থা পুরোপুরি বেহালের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করতেও ট্রাফিক পুলিশেরও ভুগতে হয় যানজটের জন্য।"
এবিষয়ে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের পরিস্থিতির বিষয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,"আগামী বর্ষায় যেনো বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কে জনদূর্ভোগ না থাকে সেই লক্ষেই রাস্তার মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।পাশাপাশি ড্রেনের কাজও করা হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমাদের কাজের কিছুটা বিঘ্নতা ঘটেছে। তবুও সর্বচ্চো চেষ্টা করা হচ্ছে এই বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই আগামী বর্ষের আগেই আমাদের রাস্তা পুরোপুরি চলাচলের জন্য উপযোগী হবে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর