
গাইবান্ধার সাঘাটায় এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে রহস্য ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। হারানো মোবাইলের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়ে সিজু মিয়া (২১) নামে ওই ছাত্রের আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা? পুলিশের দাবি, উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার পর পালিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন তিনি, সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। কিন্তু নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত সিজু কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইউনিয়ন সভাপতি ছিলেন। তিনি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাগুড়িয়া গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়া ও রিক্তা বেগমের ছেলে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ভাইরাল: পুলিশের ভাষ্যমতে, ২৪ জুলাই রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে সিজু থানায় প্রবেশ করেন। সেসময় তিনি উত্তেজিত হয়ে পুলিশের রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং ছুরিকাঘাত করতে উদ্যত হন। পরে তিনি দৌঁড়ে পালিয়ে থানার পাশের একটি পুকুরে ঝাঁপ দেন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
২৫ জুলাই সকালে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর থানার সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয়দের ধারণ করা পুকুরপাড়ে লাঠিপেটার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা পুরো ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তোলে।
তদন্ত ও পুলিশ সদস্য ক্লোজড: এ ঘটনায় সিজুকে ফোন করে থানায় ডেকে আনা সাঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিবুল ইসলামকে ক্লোজড করে গাইবান্ধা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল আলম বলেন, "ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে। তদন্ত চলছে।" পুলিশ সদরদপ্তর ও রংপুর রেঞ্জ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দাফনের পর থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি: ময়নাতদন্ত শেষে সিজুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। এরপর থেকেই সাঘাটা ও গাইবান্ধা শহরে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে।
স্বজন, সহপাঠী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের ‘গল্প বানানো কাহিনি’র আড়ালে একটি তরুণের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর