
মায়ের চোখ আজও পথ চেয়ে থাকে! হয়তো ফিরবে হৃদয়, হয়তো আবার একবার “মা” বলে ডাকবে।
গত বছরের ৫ই আগস্ট। দেশে গণঅভ্যুত্থান, সরকারের পতন, রাজপথে বিজয়ের উল্লাস। হৃদয়ের পরিবারের দাবি, সেইদিন বিকেলে গোপালপুর উপজেলার আলমনগরের কলেজছাত্র হৃদয়কে; গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে শরিফ মেডিক্যাল হাসপাতালের সামনে বিজয় মিছিল থেকে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য তাকে ঘিরে ধরে, বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালায়। মাটিতে শুয়ে পড়া রক্তমাখা নিথর দেহ চ্যাংদোলা করে টেনে নিয়ে যায় পুলিশ। সেদিনের সেই নির্মম ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে নাড়িয়ে দেয় হাজারো মানুষের হৃদয়।
হৃদয় ছিল হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। পরিবারের একমাত্র সন্তান। লেখাপড়ার খরচ চালাতে গাজীপুরে অটোরিকশা চালাত সে। গতবছর ৫আগষ্ট বিকাল থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তার । তার মা, রেহেনা বেগম, আজও প্রতীক্ষায় হয়তো ফিরে আসবে বলে। অন্তত হাড়গোড়ে খোঁজ মিললেও বাড়ির উঠোনে সমাধিস্থ করতে চান দিনমজুর বাবা লালমিয়া।বৃদ্ধ বাবা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও শোকে আর ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। এনজিওর ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে আরও সংকটে পড়েছে পরিবারটি।
এই ঘটনায় হৃদয়ের ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী মো. ইব্রাহিম বলেন, গতবছর ৫ আগষ্ট সকাল থেকেই হৃদয় ও তিনি আন্দোলনে অংশ নেয়। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর তারা সকলের সাথে আনন্দ মিছিলে অংশ নেয়। মিছিলটি কোনাবাড়ী থানার কাছাকাছি পৌছালে থানার ভিতর থেকে পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। এক
পর্যায়ে পুলিশের ১০-১২ জনের টিম শরিফ মেডিক্যালের সামনে হৃদয়কে ঘেরাও করে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। পুলিশ লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে টেনে নিয়ে যায় এবং কোনাবাড়ি থানার সামনে বেঞ্চের আড়ালে লুকিয়ে রাখে। এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, এক বছর পর সরকার নিহতের লাশ উদ্ধারের জন্য তুরাগ নদীতে কাজ করেছে। যদি আমার ভাইয়ের একটি একটি হাড়ও যদি পাই তাহলে সেটি নিয়ে পরিবারের সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বুঝ দিতে পারবো। বাড়ির পাশে একটি কবর দিতে পারবো।
নিহত হৃদয়ের বড় বোন জেসমিন আক্তার বলেন, অভাবের সংসারে হৃদয় কষ্ট করে লেখাপড়া করতো। হৃদয়ের লাশ পাওয়া যায়নি বলে আমার ভাই শহিদের মর্যাদা পায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।
হৃদয়ের মা-বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা শুধু আমাদের ছেলের হাড়গোড় ফেরত চাই। আর যারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তাদের ফাঁসি চাই।
হৃদয়ের লাশের সন্ধানে তুরাগ নদীতে ডুবুরি দল
কলেজ ছাত্র হৃদয়কে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিহত ওই কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধারে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা ব্রিজ এলাকায় তুরাগ নদীতে তিন কিমি এলাকাজুড়ে অভিযান চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। উদ্ধার অভিযান চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কমিটির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে যে ব্যক্তিগত গাড়িটি ব্যবহার করে হৃদয়ের লাশ তুরাগ নদীতে ফেলা হয়েছে সেই গাড়ির চালক রহিম
(২৭) আদালতে ১৬৪ দ্বারা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার তুরাগ নদীতে
অভিযান চালানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর