• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩৭ মিনিট পূর্বে
আরিফ হোসেন
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট, ২০২৫, ০২:০৯ দুপুর

নিখোঁজ জেলে শাহে আলমের পরিবার আজও এক টুকরো আশায় বুক বেঁধে আছে

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

ঠিক এক বছর আগে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জেলে মো. শাহে আলম। আজও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। সময় পেরিয়ে গেলেও থেমে আছে তার পরিবারের জীবন, থেমে আছে স্বাভাবিকতার ছন্দ। শাহে আলমের পরিবার আজও এক টুকরো আশায় বুক বেঁধে বসে আছে, যদি একদিন সে ফিরে আসে।

জানাযায়, ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই আহাম্মদপুর ইউনিয়নের রুবেল চৌকিদারের মালিকানাধীন সাগরগামী একটি ট্রলার ১৩ জন মাঝি মাল্লা নিয়ে মাছ ধরতে সাগরে যায়। মাছ ধরা শেষে ৩ আগস্ট ট্রলারটি শুকনাখালী ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ট্রলারটি কিছুক্ষণ চালানোর পর শিবচর এলাকায় অসংখ্য ডুবোচর ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পানির ডেউয়ে ট্রলারটি আকস্মিকভাবে উল্টে যায়।

এসময় ১৩ জন মাঝি মাল্লার মধ্যে ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে অন্য একটি ট্রলার৷ তবে নিখোঁজ হয়ে যান ৮ জন জেলে। পরে বহু খোঁজাখুঁজি করার ৪ জন মরদেহ উদ্ধার করতে পারলেও বাকি ৪ জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদেরই একজন মো. শাহে আলম।

শাহে আলমের স্ত্রী নেকু বেগম আজও অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই তাকান ঘরের দরজার দিকে যদি কখনো তার স্বামী ফিরে আসে। “মাঝেমধ্যে মনে হয়, দরজায় কড়া নাড়ছে। ছুটে গিয়ে দেখি, কেউ নেই। মনে হয়, বেঁচে থাকলেও কোনো দ্বীপে আটকে আছে, কেউ হয়তো খুঁজে পায়নি।”

নেকু বলেন, "দুই সন্তানের জনক শাহে আলম ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার অনুপস্থিতিতে হাঁস-মুরগি পালন ও মাঝে মাঝে লোকের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। বড় মেয়েটি বিয়ের উপযোগী। ছোট মেয়েটির পড়ালেখাও অনিয়মিত হয়ে গেছে। দুই মেয়েসহ আমাদের জ্বর। টাকার অভাবে চিকিৎসা চলছেনা আমাদের। মৎস্য অফিস থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম এবং আমার ভাইয়েরা টাকা দিয়ে সাহায্যে করেছে। তারা আর কত সাহায্য করবে। সরকার আমাদেরকে নিয়মিত সাহায্য করলে সন্তানদের নিয়ে কোনরকম জীবন পার করতাম।

তিনি আরো বলেন, “স্বামী বলেছিল, মাছ ধরেই ফিরে আসব। সেই এক বছর হয়ে গেল। কোনো খবর নাই। আমি শুধু চাই, যদি মরেও গিয়ে থাকে, লাশটা অন্তত পেতাম, তাহলে জানাজা পড়ে কবরে শুইয়ে দিতাম।”

স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রফিক মাস্টার বলেন, “শাহে আলম ভালো জেলে ছিল, সাহসীও ছিল। কিন্তু ট্রলার মালিকরা সবসময় ঝুঁকি নেন। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা থাকলেও অনেক সময় উপেক্ষা করে মাছ ধরতে পাঠানো হয়। আর খেসারত দিতে হয় আমাদের মতো গরিব মানুষদের।”

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, নিখোঁজ জেলে শাহে আলমের পরিবারকে মৎস্য অফিস ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেছিল । তিনি বলেন, “যেহেতু তার পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই, সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ আসলে সহযোগিতা করা হবে। তবে নিখোঁজ প্রমাণে কাগজপত্র ও রিপোর্ট লাগে, যা অনেক পরিবার দিতে পারে না।”

চরফ্যাশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নোমান সিকদার জানান, “নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সরকার মৃতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়, কিন্তু নিখোঁজ হলে পরিবারগুলো পড়ে বিভ্রান্তিতে, তারা মরেছে, না বেঁচে আছে সেটা প্রমাণ করতে পারে না।”

তিনি বলেন, চরফ্যাশনের উপকূলজুড়ে এমন পরিবার অনেক। যারা প্রতি বছর সাগরে ঝুঁকি নিয়ে যায় পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে। কিন্তু ঝড়, জোয়ার, অনিরাপদ ট্রলার আর দায়হীন ব্যবস্থাপনার কারণে কেউ কেউ আর ফিরতে পারে না। শাহে আলমের মতো আরও অনেক জেলে হয়তো সাগরের তলায় চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের পরিবারগুলো এখনো অপেক্ষায়, ফিরে আসবে কি প্রিয়জন?

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]