
বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা একটি মামলার আসামি আল আমিন হোসেন প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আল আমিন হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার বাসুদেবকোল বুদারচর গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রায় সকল স্তরের নেতা-কর্মী মামলা, হামলা ও জনরোষের শিকার হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত আল আমিন তার আদম ব্যবসা, পুকুর ও বালু-মাটি ব্যবসাসহ সকল প্রতিষ্ঠান বহাল তবিয়তে পরিচালনা করছেন। অভিযোগ উঠেছে, গণঅধিকার পরিষদের নেতা আব্দুর রহিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, তার বাড়িঘর ভাঙচুর ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার তিনি অন্যতম আসামি।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে বাদীর রামগাঁতী মহল্লার বাড়িতে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হামলা ও ভাঙচুর করে। এতে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আল আমিনসহ আসামিরা ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে মামলার বাদী আব্দুর রহিমকে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এমন একটি মামলার আসামি আল আমিন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। গণঅধিকার পরিষদের অনেক নেতা-কর্মী প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে থাকলেও, আল আমিন কেন প্রকাশ্যে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মামলায় সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও জান্নাত আরা তালুকদার হেনরি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাসসহ ৫১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গণঅধিকার পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। অভিযুক্ত আল-আমিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গণঅধিকার পরিষদের নেতা আব্দুর রহিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, তার বাড়িঘর ভাঙচুর ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে বাদীর রামগাঁতী মহল্লার বাড়িতে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হামলা ও ভাঙচুর করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। আসামিরা ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে বাদী আব্দুর রহিমকে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর তারা আব্দুর রহিমকে থানায় নিয়ে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় আদালতে চালান করে দেয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সলঙ্গা থানার ঘুড়কা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের প্রশ্রয়ে আল আমিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তিনি ইটভাটা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন ও বালু ব্যবসা চালাতেন। তার এলাকায় পুকুর খনন করতে গেলে আল আমিনকে অংশীদার করতে হতো, অন্যথায় জোর করে মাটি কেটে নিতেন। অভিযোগ রয়েছে, রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন শুভন সরকারের ইটভাটার মালিক হওয়ায় আল আমিন তার ডান হাত হয়ে ওঠেন এবং শুভন সরকারের ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় তিনি বহু অবৈধ কাজ করেছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর