
গাইবান্ধার আদালতের চোখের সামনে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। প্রতারণার মামলায় কারাগারে থাকা দুই সন্তানের জনক ও আলোচিত হ্যাকার চক্রের হোতা পলাশ রানাকে শিশু সাজিয়ে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়ায় জেলার আদালতপাড়ায় তীব্র চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। জন্মনিবন্ধন জালিয়াতির এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই ভোরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযানে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হ্যাকার চক্রের হোতা পলাশ রানাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আটক করে। এ সময় বিপুল পরিমাণ সিম, মোবাইল ও প্রযুক্তি সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই সহযোগী সুমন মিয়া, সাইদুল ইসলাম ও আবু সাইদ লিটনসহ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, তালুককানুপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে পলাশ রানা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভাতার বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছিলেন।
এরপর ২০ জুলাই গোবিন্দগঞ্জ আমলি আদালতে পলাশ রানা ও তার সহযোগীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে ২৭ জুলাই দায়রা জজ আদালতে মিস কেস দায়ের করেন আইনজীবী শেফাউল ইসলাম রিপন। তবে অভিযোগ উঠেছে, মামলার তথ্য গোপন রেখে ভিন্ন কৌশলে ৩ আগস্ট শিশু আদালত-২ এ পলাশকে “শিশু” হিসেবে উপস্থাপন করে জামিন আদায় করেন ওই আইনজীবী। এ সময় ভুয়া জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে ২৫ বছর বয়সী পলাশকে ১৭ বছর ৭ মাস বয়সী শিশু বানানো হয়!
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আদালতপাড়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ, পলাশ রানা দুই সন্তানের জনক এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ স্পষ্টভাবে ১ জুন ২০০০। অথচ ভুয়া জন্মনিবন্ধনে তার জন্মতারিখ দেখানো হয় ১৫ জানুয়ারি ২০০৮।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা বলেন, এটি আদালতের মর্যাদায় কলঙ্কজনক। শুধু আইনজীবী নন, আদালতের অসাধু কর্মচারী ও সেরেস্তাদাররাও এতে জড়িত থাকতে পারেন। আইনজীবী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জালিয়াতি করে আসামি জামিনে মুক্তি পাওয়া লজ্জাজনক। আদালতে এমন ঘটনা চলতে দেওয়া যায় না।”
আইনজীবী আশরাফুল আলম রঞ্জু বলেন, “এমন ঘটনা নতুন নয়। আগেও জালিয়াতি করে জামিন নেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস হবে।”
বাংলাদেশ নারী মুক্তিকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী বলেন, “আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সেখানে যদি জালিয়াতি হয়, তাহলে জনগণ কোথায় যাবে? দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
এদিকে অভিযুক্ত আইনজীবী শেফাউল ইসলাম রিপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আসামির বয়স কম হওয়ায় আদালতে জামিন আবেদন করি। জন্মনিবন্ধন জাল কি না তা আমি জানি না।”
তবে জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া এমন প্রতারণা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় আদালতের অভ্যন্তরে অসাধু চক্রের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে প্রধান বিচারপতি ও বার কাউন্সিল বরাবর অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও অভিযুক্ত আইনজীবীর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন। আইনজীবী ও সচেতন মহল দ্রুত তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর