
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও শিল্প-বাণিজ্যের ইতিহাসে হারুনার রশিদ খান মুন্নু এক বহুল আলোচিত নাম। আজ তাঁর ৯২তম জন্মদিন। এ দিনে তাঁকে স্মরণ করছে রাজনৈতিক সহকর্মী, শিল্পমহল এবং মানিকগঞ্জের সাধারণ মানুষ। উদ্যোক্তা হিসেবে শিল্পের বিকাশ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে নেতৃত্ব — তাঁর বহুমুখী অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে। দেশের শিল্প-অর্থনীতি ও রাজনীতির মঞ্চে অবদান রাখা এই স্বপ্নবাজ মানুষের জীবনী আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
হারুনার রশিদ খান মুন্নু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৩ সালের ১৭ আগস্ট। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে। শৈশবেই জীবনে নেমে আসে এক কঠিন বাস্তবতা। মাত্র এক বছর বয়সে পিতৃহারা হন তিনি। এরপর মায়ের তত্ত্বাবধানেই বেড়ে ওঠেন মুন্নু। জীবনের শুরুতে যে অভাব-অনটন ও সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তা-ই তাঁর পরবর্তী জীবনে দৃঢ়তা আর কর্মস্পৃহা জুগিয়েছিল।
শৈশবকাল থেকেই তাঁর মধ্যে ছিল দৃঢ়চেতা মনোভাব ও নেতৃত্বের গুণ। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। কৈশোরেই তিনি ভেবেছিলেন দেশের জন্য কিছু করার কথা।
পারিবারিক জীবনে তিনি ১৯৫৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হুরুন নাহার রশিদের সঙ্গে। তাঁদের দুই কন্যা – আফরোজা খান রিতা ও ফিরোজা মাহমুদ। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েই তিনি নিজের কর্মজীবনকে এগিয়ে নেন।
স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে উদ্যোগী হন মুন্নু। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মুন্নু ফ্যাব্রিক্স, মুন্নু গার্মেন্টস ও মুন্নু সিরামিকস। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে বিশ্ববাজারে পরিচিত করে তোলে, অন্যদিকে লাখো শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত আজ যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, তার পেছনে হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মতো উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
শিল্পোদ্যোক্তা থেকে তিনি যখন রাজনীতিতে আসেন, তখনই আলোচনায় আসেন সাধারণ মানুষের মাঝে। মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী হয়ে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শুধু সংসদ সদস্যই নন, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন এবং সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন। এলাকাবাসীর উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতে অগ্রগতি সাধনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর সময়ে মানিকগঞ্জে বহু সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনকল্যাণমূলক কাজ বাস্তবায়িত হয়।
রাজনীতি ও ব্যবসার বাইরেও তিনি ছিলেন সমাজসেবামুখী একজন মানুষ। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সহায়তা করেছেন তিনি। এলাকার দরিদ্র, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিরলসভাবে। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ আজও তাঁর মানবিক অবদানের সাক্ষ্য বহন করে।
হারুনার রশিদ খান মুন্নুর জন্মদিনে আজ মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর জন্মদিনে নিজের হাতে গড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক গুণগ্রাহী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তাঁকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়েছেন।
মুন্নু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা বলেন, হারুনার রশিদ খান মুন্নু ছিলেন এক বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। শিল্পোদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। আমার পিতার স্বপ্ন ছিল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। তিনি জীবদ্দশায় যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পথ দেখাবে।
বেলা ১১টায় গিলন্ড মুন্নু সিটিতে হারুনার রশিদ খান মুন্নুর কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানান মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, মুন্নু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল ও মুন্নু মেডিকেল কলেজ। এ সময় মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা, মুন্নু মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল করিম, মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ জুলফিকার আহমেদ আমিন (অব.) সহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর