
*কক্সবাজার ভেটেরিনারি হাসপাতাল: নামে হাসপাতাল, বাস্তবে সেবার অভাব*
কক্সবাজার জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল কেবল নামেই হাসপাতাল। বাস্তবে এখানে নেই ভেটেরিনারি সার্জন, নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক কিংবা জনবল। পর্যাপ্ত ওষুধও মেলে না। ফলে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর চিকিৎসার আশায় আসা খামারিরা কার্যকর সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে দায়িত্বে আছেন কেবল ভেটেরিনারি অফিসার ডা. নন্দন কুমার চন্দ এবং উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু তাহের। কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালাতে যেসব পদ থাকা জরুরি— ভেটেরিনারি সার্জন, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, ড্রাইভার বা নৈশ প্রহরী— তার কিছুই নেই। বলা যায়, একজন চিকিৎসক আর একজন সহকারী দিয়েই কোনো রকমে হাসপাতাল চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বরাদ্দকৃত টিকা ও ওষুধও নিয়মিতভাবে খামারিদের কাছে পৌঁছায় না। ফলে অনেক সময় পশু অসুস্থ হলে তারা নিরুপায় হয়ে ব্যক্তিগতভাবে বেসরকারি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এতে খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি অনিশ্চয়তায় পড়ছেন হাজারো খামারি।
খরুলিয়া কোনার পাড়া গ্রামের খামারি আব্দুস সালাম বলেন, ‘পশু অসুস্থ হলে আমরা এখানে নিয়ে আসি। কিন্তু ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই— চিকিৎসা মেলে ভাগ্য ভালো হলে। অনেক সময় টিকা দেওয়া ছাড়া কিছুই হয় না।’
রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি শাহাদাতের অভিযোগ, হাসপাতাল তো আছে, কিন্তু চিকিৎসা নেই। বেসরকারি ভেটেরিনারি ডাক্তার ডেকে এনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়।
বাংলাবাজার এলাকার খামারি আবদু সবুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই হাসপাতাল নেই-নেই রোগে আক্রান্ত। গেলে টিকা পাওয়া যায়, সেটাও আবার ফি দিয়ে। সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ কোথায় যাচ্ছে তা আমাদের অজানা।’
কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ছোট-বড় হাজারো খামার রয়েছে। এসব খামারে উৎপাদিত হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়। কিন্তু নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা না পেয়ে খামারিরা যখন পশু হারাচ্ছেন, তখন এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। অনেক খামারি ইতিমধ্যে লোকসানের আশঙ্কায় খামার ছোট করছেন বা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা মনে করেন, জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা সেবা চালু না হলে প্রাণিসম্পদ খাত বড় ধরনের ধাক্কা খাবে, আর এর বোঝা পড়বে কৃষক ও খামারিদের কাঁধে।
জেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডা. নন্দন কুমার চন্দ বলেন, ‘একজন কম্পাউন্ডার দিয়েই আমাকে পুরো হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই একটি ল্যাব চালু হবে, যেখানে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে সেবার মান কিছুটা উন্নত হবে।’
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান জানান, জেলায় বর্তমানে ৪১ জন জনবল সংকট রয়েছে। তার ভাষায়, জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় কেবল প্রশাসনিক কাজ দেখে। চিকিৎসা দেওয়া ও ওষুধ বিতরণের দায়িত্ব জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর