
বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের প্রাচীনতম শেরপুর হাট এখন দখল আর ভাড়া বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী হাটটি এখন ভোগ দখলে থাকা স্থায়ী দোকান ঘরের সারি। পৌরসভার খাস জায়গা দখল করে কেউ ২০ বছর ধরে, কেউ ৩০ বছর ধরে স্থায়ী দোকান ঘর তুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দোকানে মালিক পরিবর্তন করে নিজেদের পুঁজি হলে যুগের পর যুগ সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
দোকান মালিকরা জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে চুক্তিপত্র করে নেওয়া হয়েছে। অনেকে মালিকানাধীন দাবি করে বড় দোকানের মাসিক ভাড়া ১৫ হাজার টাকা আর ছোট দোকানের ১০ হাজার টাকা করে দোকান ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, একটি হাট কেবল ব্যবসার জায়গা নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ। সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা চালালে তা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। অবিলম্বে প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে ঐতিহ্যের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। শুধু শেরপুর হাট থেকেই প্রতিবছর সরকারের কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আয় হওয়ার কথা থাকলেও তা ব্যক্তিগত ভাড়ার ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে অনেক টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরপুর পৌরসভার হাটখোলা এলাকায় ৭৩টি দোকান যুগের পর যুগ ভোগ দখল করে ব্যবসা বাণিজ্য করেছে দোকান মালিকরা। এর মধ্যে কেউ আবার পৌরসভা থেকে চুক্তিপত্র করে অন্যকে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মাসে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। অথচ কোনোভাবেই সরকার পাচ্ছেনা কোন রাজস্ব। এক সময় ক্ষমাতাসীন, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বা পৌরসভার কর্তৃপক্ষের নিকট থকে চুক্তিপত্র করে নেওয়ার দাবি করছে অনেকে। কিন্তু ৭৩টি দোকান যুগের পর যুগ ভোগ দখল করে ব্যবসা বানিজ্য করেছে দোকান মালিকরা অথচ প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় এ দখল আজ চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, অনেকে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে হাটের পজিশন নিয়েছেন। আবার কেউ আত্মীয়তার কারণে বিনা টাকায় পৌরসভা থেকে চুক্তিপত্র নিয়েছেন। ফলে সরকারের রাজস্ব খাত যুগের পর যুগ ফাঁকা হচ্ছে।
শেরপুর পৌরসভার হাটখোলার কাজল নামের এক দোকানদার জানান, আমার আত্মীয় পৌরসভার নিকট থকে লিজ নিয়েছিল। আমি আবার তার নিকট থেকে নিয়ে ২৫ বছর ধরে দোকান করেছি। পৌরসভায় শুধু ট্যাক্স-ভ্যাট দিই, কিন্তু ভাড়া দিতে হয় না। তবে প্রতি হাটে ৪০ টাকা খাজনা দিই।
চুরীপট্টির প্রভাত বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত জায়গা। প্রায় ৩০ বছর ধরে ভোগদখল করছি। পৌরসভাকে মাসিক ভাড়া দিতে হয় না, কেবল হাটের দিনে খাজনা দিতে হয়। তবে চাইলে পৌরসভা মুহূর্তেই ভেঙে দিতে পারে। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় তাহলে কীভাবে ব্যক্তিগত জায়গা হল?
চাউল হাঁটি এলাকার খলিল হাজি জানান, এই লাইনের সব দোকান ব্যক্তি মালিকানা। আমরা শুরু থেকেই ওই মালিককে ভাড়া দিচ্ছি। বড় দোকানের মাসিক ভাড়া ১৫ হাজার টাকা আর ছোট দোকানের ১০ হাজার টাকা। পৌরসভা কিছুই পায় না।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শফিকুল ইসলাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শেরপুর হাট থেকে নিয়মিত রাজস্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু শুরু থেকেই স্থানীয়রা ভোগদখলের কারণে পৌরসভা প্রাপ্য আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অতিদ্রুত তাদের পৌরসভার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আশিক খান বলেন, অবিলম্বে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করে সঠিক নীতিমালার আওতায় দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া আদায় করা হবে। যেভাবে চলছে এখনই ব্যবস্থা না নিলে একসময় শেরপুর হাট পুরোপুরি ব্যক্তিগত মালিকানায় চলে যাবে, যা হবে সরকারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর