কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অভিনব পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করায় শরীফা বেগম (৫০) নামে এক মধ্যবয়স্ক নারীকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভৈরব কার্যালয়ের সদস্যরা। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর পশ্চিম প্রান্তে একটি লেগুনার ভেতর থেকে চুলের খোপায় লুকানো দুই হাজার ইয়াবাসহ তাকে আটক করা হয়।
আটক শরীফা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার শিবনগর গ্রামের আব্দুল হাসিম মিয়ার স্ত্রী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব কার্যালয়ের পরিদর্শক চন্দন গোপাল সুর জানান, গোপন সংবাদে জানা যায় শরীফা নামের ওই নারী লেগুনা যোগে ভৈরবের দিকে আসছে এবং তার মাথার চুলের খোপায় বিশেষভাবে ইয়াবা লুকিয়ে পাচারের চেষ্টা চলছে। সে অনুযায়ী মাদকদমন টিম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর পশ্চিম প্রান্তে আগে থেকেই অবস্থান নেয়। লেগুনাটি সেতুর কাছে আসলে অভিযানে থাকা সদস্যরা সেটি থামিয়ে নারীকনস্টেবলের মাধ্যমে শরীফাকে নামিয়ে তল্লাশি করেন। তল্লাশির এক পর্যায়ে তার ঘন করে বাঁধা চুলের খোপা খুলে দেখা যায়, ভেতরে অত্যন্ত কৌশলে লুকানো রয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট। গণনায় পাওয়া যায় মোট দুই হাজার পিস ইয়াবা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে নারীদের ব্যবহার করে মাদক পরিবহনের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে বয়সে প্রবীণ বা মধ্যবয়স্ক নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ কম হয়। চুলের খোপা বা শরীরের ভাঁজে মাদক লুকিয়ে বহন করা এখন মাদককারবারিদের নতুন ফন্দি বলে জানিয়েছে মাদকদমন অধিদপ্তর।
পরিদর্শক চন্দন গোপাল সুর আরো বলেন, “এটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত একটি পদ্ধতি। আমাদের কাছে পূর্বেই তথ্য ছিল যে শরীফা চুলের খোপায় ইয়াবা লুকিয়ে পাচার করছে। তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই অভিযান চালানো হয়। নারী কনস্টেবল দিয়ে তল্লাশি করে দুই হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আটক শরীফা দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ভৈরব, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী। এসব জেলার যোগাযোগকেন্দ্রিক এলাকা হওয়ায় ভৈরব বিভিন্ন ধরনের মাদক পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে পরিণত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নদীপথ হওয়ায় এখানে মাদক পাচারকারীদের নানামুখী নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভৈরবে নারী মাদককারবারি আটক হওয়া ঘটনাও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা এখন নারী, শিশু, এমনকি বৃদ্ধকেও ব্যবহার করছে ‘নিরাপদ বাহক’ হিসেবে।
অভিযান শেষে শরীফাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ইয়াবা জব্দ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, “এ ধরনের অভিনব পদ্ধতিতে মাদক পাচারকারীরা যত চেষ্টাই করুক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিত্য নতুন কৌশলে নজরদারি করছে। মাদক রোধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।”
স্থানীয়দের মতে, ভৈরবে যেভাবে একের পর এক নারী মাদককারবারি ধরা পড়ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাদের ভাষায়, “নারীরা যদি এভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সমাজে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। যুব সমাজকে বাঁচাতে প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর