
কুমিল্লার তিতাসে শিশু সায়মন ওরফে আরিয়ানকে হত্যা অভিযোগে একজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক সাব্বির মাহমুদ চৌধুরী। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরবেলা এই রায় দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিল্লাল পাঠান (৪০) তিতাস উপজেলার বিরামকান্দি পাঠানবাড়ীর মো. খেলু পাঠানের ছেলে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেফালী আক্তার (৪৩) একই উপজেলার কলাকান্দি উত্তরপাড়া মাস্টারবাড়ীর জামাল মিয়ার স্ত্রী।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, পূর্ব আক্রোশের বশবর্তী হয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভুক্তভোগী সায়মন ওরফে আরিয়ান (৭) কে হত্যা করে কলাকান্দি বালুর মাঠের (কাশবনে) লাশ গুম করে। জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বিকেলে সায়মন ওরফে আরিয়ান আসামি শেফালী আক্তারের ছেলে রাফির সঙ্গে খেলাধুলা করার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। বাদীনি (নিহত শিশুর মা) তাঁর আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তিতাস থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগীর অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট নিহত শিশুর গর্ভধারিণী মাতা খোর্শেদা আক্তার (৪০) বাদী হয়ে তিতাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. নয়ন মিয়া ও সাব-ইন্সপেক্টর মো. জাহিদুল হক এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার সাব-ইন্সপেক্টর জীবন বিশ্বাস তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট আসামি শেফালী আক্তার ও একই বছর ৩১ ডিসেম্বর আসামি মো. বিল্লাল পাঠানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। আসামি মো. বিল্লাল পাঠান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধানমতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবন বিশ্বাস ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর আসামি বিল্লাল পাঠান ও শেফালী আক্তারের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারার বিধানমতে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে এলে চলতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় চার্জ গঠনক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি হয়।
শুনানি শেষে আসামি মো. বিল্লাল পাঠানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মহামান্য হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড এবং ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ০১ (এক) বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া দণ্ডবিধির ২০১ ধারার বিধানমতে তাকে ৫ (পাঁচ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অনাদায়ে আরও ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত্যুদণ্ড না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে গলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হল।
আসামি শেফালী আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ (এক) বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ২০১ ধারার বিধানমতে তাকে ৫ (পাঁচ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসামি শেফালীর উভয় দণ্ড একসাথে চলবে।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. ইকরাম হোসেন বলেন, শালি-দুলাভাইয়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলায় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শিশু সায়মন ওরফে আরিয়ানকে হত্যা করে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর