
এক যুগ পর মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীজুড়ে তৈরি হয়েছিল অন্যরকম এক আবহ। ঢাকের তালে তালে বৈঠার ছন্দ, শঙ্খধ্বনি আর হাজারো দর্শকের উল্লাসে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছিল উৎসবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা যেন নদীকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছিল।
আজ শনিবার (২৩ আগস্ট) ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিক বাইচের নৌকা অংশ নেয়। প্রতিটি নৌকায় মাঝিরা প্রাণপণ বৈঠা চালিয়ে ছুটে চলে গন্তব্যের দিকে। কারও মুখে ঘাম ঝরে, কারও গলায় স্লোগান- 'হই-হই হইয়া' ও 'আল্লাহ নাম লইয়া- চালাও বৈঠা ভাইয়া' সব মিলিয়ে কালীগঙ্গা নদীর বুক যেন কেঁপে ওঠে বৈঠার আঘাতে।
নৌকার প্রতিযোগিতার সঙ্গে দর্শকদের উচ্ছ্বাসও সমান তালে এগিয়েছে। নদীর দুই তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল হাজারো মানুষ। কেউ চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছিল, কেউবা হাততালি দিয়ে মাঝিদের মনোবল বাড়াচ্ছিল। অনেকে আবার নৌকা ভাড়া করে মাঝনদী থেকে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছেন।
দুপুর ১ টায় এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। এ সময় জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশ সুপার মোছা: ইয়াসমিন খাতুন, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক আফরোজা খানম রিতা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ মাহবুব।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখা এবং নদীমাতৃক সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা চাই, এ ধরনের উৎসব মানুষের মাঝে সম্প্রীতি ও আনন্দ ছড়িয়ে দিক।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, একসময় বর্ষাকালে নিয়মিত নৌকা বাইচ হতো। আজকের আয়োজন তাদের পুরনো দিনের স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে। কালীগঙ্গার বুকে আজকের বৈঠার ছন্দ যেন প্রমাণ করল গ্রামীণ ঐতিহ্য এখনও বেঁচে আছে, শুধু তাকে নিয়মিতভাবে তুলে ধরার প্রয়োজন।
অংশগ্রহণকারী মাঝি আনোয়ার হোসেনের চোখে তখনও ঘাম। তিনি বলেন, এই নৌকা বাইচ শুধু প্রতিযোগিতা না, আমাদের আবেগ। বৈঠা চালানোর সময় মনে হয় নদী আমাদের সাথে কথা বলছে।
প্রতিযোগিতা দেখতে আসা দর্শনার্থী সাবিহা বেগম বলেন, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে নৌকা বাইচ দেখতে আসতাম। আজ আমার সন্তানদের নিয়ে এসেছি। এ আয়োজন আমাদের গ্রামের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী নৌকাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। এদিকে নদীর তীরে বসে ছোটখাটো মেলা, যেখানে খেলনা, খাবার আর গ্রামীণ দ্রব্য বিক্রি হচ্ছিল। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ- সবাই সেই মেলায় অংশ নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর