বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ট্র্যাভেল পারমিটের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরে এসেছেন তামিলনাড়ুর সালেম স্পেশাল ক্যাম্প থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ২৪ জন বাংলাদেশি নারী, শিশু ও পুরুষ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় ভারতের বনগাঁ থানার পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁদের বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের সালেম জেলার আত্তুর স্পেশাল ক্যাম্পে আটক ২৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মুক্তির পর দু’দেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ট্র্যাভেল পারমিটের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে সালেম জেলা কালেক্টর ড. আর. বৃন্দা দেবী, আই.এ.এস.-এর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত আদেশনামায় এই ২৪ জনকে দ্রুত ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে যাঁরা স্বদেশে ফেরত এলেন, তাঁদের মধ্যে ৭ জন নারী, ৫ জন শিশু ও ১২ জন পুরুষ রয়েছেন।
তাঁরা হলেন বাদশা তালুকদারের ছেলে ইয়াসিন তালুকদার, আব্দুল জলিল হাওলাদারের মেয়ে জোবেদা বেগম, ইন্নুস হাওলাদারের মেয়ে সোনিয়া বেগম, শহর শেখের মেয়ে পারভীন, আসাদ হাওলাদারের পুত্রবধূ লাবনী আক্তার সুমাইয়া, মৃত ইউকু আলী সিকদারের মেয়ে ফাহিমা, সেলিম তালুকদারের ছেলে রিয়াজ তালুকদার, জোবেদা বেগমের ছেলে জুবাইর আসলাম, পারভীনের ছেলে পারভেজ, লাবনী আক্তার সুমাইয়ার মেয়ে জুবাইদা, সোনিয়া বেগমের ছেলে ইউসুফ খান, ইয়াসিন তালুকদারের ছেলে ইয়ামিন, জামাল সরদারের ছেলে সুজান সরদার, আশরাফ আলী খার ছেলে ইলিয়াস খান, আব্দুল সালাম হাওলাদারের স্ত্রী বকুল বেগম, রাহেন উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে আব্দুল সালাম হাওলাদার, আব্দুল সালাম হাওলাদারের ছেলে মুকুল, কালীল হাওলাদারের ছেলে ইব্রাহিম হাওলাদার, আব্দুল হাকিম শেখের ছেলে ফাজুল হাওলাদার, মাকাবুর হাওলাদারের ছেলে মারুফ হাওলাদার, মুজিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান হাওলাদার, সায়েদ আলী খানের মেয়ে কুলসুম আক্তার, বাবুল মিয়ার ছেলে কাইয়ুম মিয়া ও মৃত দরিগ আলীর ছেলে জাফর আহমেদ।
যদিও এই প্রক্রিয়াটি মোট ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু আদেশে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে ২ জন—আব্দুল সাইয়েদ বাতালীর ছেলে নূর মোহাম্মদ এবং হাসান আলীর স্ত্রী সুরমা—আপাতত তাঁদের পরিবারের অনুমতি না পাওয়ায় দেশে ফিরতে চাইছেন না। ফলে এই ২৪ জনকে মুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান, অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করার দায়ে ভারতীয় পুলিশ তাঁদের আটক করে। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ট্র্যাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কাগজপত্র যাচাই শেষে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁদের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ জানান, থানা পুলিশের আইনগত কার্যক্রম শেষে তাঁদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যশোরের ‘জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার-যশোরের ফিল্ড ফেসিলিটেটর মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বেনাপোল পোর্ট থানা থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের গ্রহণপূর্বক তাঁদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এঁদের মধ্যে অধিকাংশ স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে এসেছেন। একজনের বাড়ি কুমিল্লা, একজন ঢাকার এবং বাকিরা সবাই বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর