
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজসহ পুলিশ কর্মকর্তারা যখন তীব্র বিতর্কের মুখে, ঠিক তখনই ভাইরাল হলো আরেক ঘুষ কাণ্ড। এবার চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে পুলিশের এক সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তার (জিআরও) প্রকাশ্যে টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পুলিশের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নগরজুড়ে তীব্র সমালোচনা আরও জোরালো হয়। তার আগে বুধবার বিকেলে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে বিবৃতির মাধ্যমে সাংবাদিক সমাজকে হুমকি দেন। এতে সাংবাদিক মহলে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। এরপর একই দিন সন্ধ্যায় ডবলমুরিং থানার ওসি বাবুল আজাদ এক সাংবাদিককে আটক করে ২০ মিনিট হাজতে আটকে রাখেন। একইসাথে আরেক সাংবাদিককেও হেনস্তা করা হয়। সাংবাদিকরা বলছেন, ডিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের সাথে কেমন আচরণ করবেন, অফিসাররা তা শেখানোর পরপরই রিহার্সাল করলেন ওসি ডবলমুরিং।
এদিকে আদালতে ঘুষ নেওয়ায় অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা হলেন নগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহীন ভূঁইয়া। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো নথিভুক্ত করতেন এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে মামলার নথি সরবরাহসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, এসআই শাহীন নিজ কার্যালয়ে চেয়ারে বসে রয়েছেন। একপর্যায়ে তার কাছে আসা একজন মানিব্যাগ বের করে তিনটি নোট দেন। তিনি টাকাগুলো গুনে নিজের কাছে রেখে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকাগুলো দেন একজন আইনজীবী। তার নাম তন্ময় বসাক। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু একটা ট্রানজেকশন (লেনদেন) ছিল। ঘুষ প্রদান কিংবা অনৈতিক লেনদেন ছিল না। ঘুষ যদি দেওয়া হতো, মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হতো। কোর্টে কোনো একটা কাজ করাতে হলে তার বিনিময়ে ৫০-১০০ টাকা দিতে হয়, এটা সবাই জানে। আমিও সামান্য টাকা দিয়েছিলাম।’
ভিডিওটি দুই মাস আগের বলে দাবি করেন তন্ময়। তিনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগে আমি একটি মামলায় কয়েকজন আসামির জামিন করিয়েছিলাম। তখন জামিনের ফাইল প্রসেসিং বিষয়ে উনার (এসআই শাহীন) কাছে গিয়েছিলাম। সম্ভবত তখন কেউ গোপনে এই ভিডিও ধারণ করে থাকতে পারে। তবে এত দিন পর কেন ভিডিওটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসআই শাহীনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি গাড়িতে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে তাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম আদালতে নগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ওই ভিডিওর বিষয়ে অবগত হয়েছি। ঘটনার পর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর