
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ঐতিহাসিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে লেভেল-১, সেমিস্টার-২ এর শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ফিনিক্স কার্নিভাল ফিস্ট’ গতকাল (২৩ আগস্ট) সমাপ্ত হয়েছে।
২১ আগস্ট আনন্দ র্যালির মধ্য দিয়ে এই আয়োজন শুরু হয়। র্যালিটি বিভিন্ন হল ও কেয়ার মার্কেট প্রদক্ষিণ করে হলে ফিরে আসে। পরে সন্ধ্যায় হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোঃ বজলুর রহমান মোল্ল্যা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম কেক কেটে ফিস্টের উদ্বোধন করেন।
দ্বিতীয় দিনে জুনিয়র-সিনিয়রদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে এবং রাতে কেয়ার মার্কেট এলাকায় জমকালো ফ্ল্যাশ মব হয়, যা শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন। এরপর আয়োজিত হয় গ্র্যান্ড ডিনার।
শেষ দিনে কালার ফিস্ট, পুল পার্টি এবং রাতে কালচারাল নাইটের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের। সাংস্কৃতিক পর্বে গান, নাচ, অভিনয়সহ নানা প্রতিভার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত করে তোলে।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুরসালিন বলেন, এ ধরনের আয়োজন শুধু আনন্দের জন্য নয়, বরং নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সবার সঙ্গে একসঙ্গে মিশে যাওয়ার একটি সময় প্রয়োজন হয়। ফিস্টের আয়োজন শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ তৈরি করে দেয়। এতে করে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়, নতুন পরিবেশে সহজে মানিয়ে নেওয়া যায় এবং একসঙ্গে পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়।
একই বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, ফ্ল্যাশ মব এবং ডিনারের এই আয়োজন দীর্ঘদিন স্মৃতিতে থেকে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই এমন একটি আয়োজন শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং ঐক্যের বার্তা দিয়েছে। শুধু খাবার আর সাংস্কৃতিক আয়োজন নয় বরং এখানে সবার অংশগ্রহণ ও উদ্দীপনাই ছিল সবচেয়ে বড় দিক। আমার মতে এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং ভবিষ্যতে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে।
শিক্ষার্থী ফুয়াদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে ওঠার পর সিনিয়রদের কাছ থেকে কেমন ব্যবহার পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই এক ধরনের কৌতূহল থাকে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হলের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। এমন আন্তরিক ও সহযোগিতাপরায়ণ সিনিয়র পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। সিনিয়ররা শুধু পড়াশোনাতেই নয়, ক্যাম্পাস জীবনের নানা দিকেও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ফলে নতুন শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই একটি পারিবারিক পরিবেশের অভিজ্ঞতা পাচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মানসিকভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছে।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজাহিদ বলেন, "আমরাও যখন লেভেল-১ এ ছিলাম, তখন এই আয়োজন করেছি। এখন জুনিয়ররা সুন্দরভাবে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। এটা আমাদের সবার জন্যই আনন্দের।"
আয়োজন সম্পর্কে হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী মো. শাহীন জানান, "ঐতিহাসিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৫৭ ব্যাচের তিন দিন ব্যাপী ফিস্টের প্রোগ্রাম নিঃসন্দেহে ভাতৃত্বের মেলবন্ধন। আনন্দ, ফূর্তিবাজিতে মেতে ওঠে সবাই। এই ফিস্টের মাধ্যমে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্কে যেন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। আর এই সম্পর্ক বজায় রেখে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল পরিবার সামনে এগিয়ে যেতে চায়।"
আরেক সিনিয়র শিক্ষার্থী মো. নুরনবী বলেন, "এই ধরনের অনুষ্ঠান আমাদের সেই ব্যস্ততার ফাঁকে একটু ভিন্ন স্বাদ এনে দেয়। এখানে আমরা পরিবার থেকে দূরে থেকেও নতুন এক পরিবার তৈরি করি, যেখানে সম্পর্ক, সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আমাদের একত্রে রাখে। আমি আশা করি এই অনুষ্ঠান আমাদের মনে দীর্ঘদিন আনন্দের স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।"
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর