
গাজীপুর সদর উপজেলা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর নবঘোষিত কমিটি ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। টাকার বিনিময়ে আওয়ামী ঘরানার, অরাজনৈতিক ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে একাধিক নেতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
গত ২১ আগস্ট জেলা জাসাসের আহ্বায়ক শাহ এরশাদ ফকির ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আব্দুর রহমান দুখুর স্বাক্ষরিত মুকুল মিয়াকে আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার পর থেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
কমিটির ১৮ নম্বর সদস্য মোখলেছুর রহমান, ২১ নম্বর সদস্য নজরুল ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাজমুল আহমেদ রনি ফেসবুকে একে একে পদত্যাগপত্র প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ—অরাজনৈতিক, মাদকাসক্ত ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিএনপি ও জাসাসের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
মোখলেছুর রহমান তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, “অরাজনৈতিক ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হয়।” এছাড়াও অভিযোগ তুলে বলেন, “আমি দুঃসময়ে আন্দোলন করেছি, জেল খেটেছি। অথচ নতুন কমিটিতে আমাকে সাধারণ সদস্য করা হয়েছে। তাই আমি পদত্যাগ করলাম।”
নজরুল ইসলাম তাঁর ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসে লেখেন, “নবগঠিত গাজীপুর সদর উপজেলা জাসাস-এর কমিটিতে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের দোসর, যাহারা ৫ তারিখের আগেও আমাদের নামের লিস্ট থানায় জমা দিয়েছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তি, যাদের আমরা কোনোদিন মিটিং-মিছিলে দেখি নাই। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে কমিটি দেওয়ায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সুনাম বিনষ্ট হওয়ায় উক্ত কমিটির সদস্য পদ হতে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।”
তিনি আরও লেখেন, “আর ভীতু লোকেরা বড় পদ পেয়েছে।” অন্যদিকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগকারী নাজমুল আহমেদ রনি বলেন, “যারা বিগত সরকারের আমলে ভয়ে দল ছেড়ে গিয়েছিল, তারাই আজ গুরুত্বপূর্ণ পদে। এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে।”
এ নিয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্যে সরব নেতাকর্মীরা। কেউ লিখেছেন, “স্বজনপ্রীতি আর টাকার খেলা ছাড়া কিছুই হয়নি।” অন্য এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “নেতার চরিত্র আর পতিতার চরিত্র এক হয়ে গেছে, টাকা থাকলেই সব চলে।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জাসাসের আহ্বায়ক শাহ এরশাদ ফকির বলেন, “যাচাই-বাছাই করেই কমিটি দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো লোককে স্থান দেওয়া হয়নি। যারা পদত্যাগ করেছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়।”
এদিকে জেলা জাসাসের দপ্তর সম্পাদক কামাল হোসেন জানান, “এই কমিটি কীভাবে দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যে লোক এলাকার ভোটারই না এবং যে লোক আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকার ভোট চেয়েছে তাদের কীভাবে কমিটিতে নাম আসে” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফেসবুকজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে নতুন এই কমিটি নিয়ে। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন—গাজীপুর সদর উপজেলার ভোটার নন, এমন ব্যক্তি কীভাবে কমিটিতে আসন পেলেন?
স্থানীয় জাসাস নেতাদের দাবি, কমিটি পুনর্গঠন করে দুঃসময়ের ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হোক। তাঁদের মতে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংগঠন অভ্যন্তরীণ সংকটে আরও জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর