• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৭ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫০ রাত

উখিয়ায় ৪ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, সন্দেহের তালিকায় দুই গ্রুপ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালিত বিশেষ অভিযানে সম্প্রতি ৪ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ হয়েছে। তবে এত বিপুল চালান উদ্ধার হলেও ধরা পড়েনি কোনো কারবারি। পাওয়া যায়নি ইয়াবার প্রকৃত মালিকানার তথ্যও। প্রায় পাঁচ লাখ ইয়াবার এই চালান কার? এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি বলেন, ‘পালংখালীর চিহ্নিত সব ইয়াবা কারবারির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশ আছে। তাই বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া কাউকে আটক করা হয় না। শুধু ইয়াবা উদ্ধার হয়, কিন্তু কারবারি থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।’

স্থানীয় আরেক যুবনেতার মতে, সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় প্রায় সব গ্রুপ মাসিক ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টাকা দেয়। লাভের একটি বড় অংশ যায় থানার কিছু কর্মকর্তার কাছেও। ফলে কারবারিরা নির্ভয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, বর্তমানে পালংখালীতে অন্তত দুই ডজন ইয়াবা কারবারি সক্রিয় রয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েক শত নেতাকর্মী। অভিযোগ আছে, ইয়াবা বাণিজ্যের লাভের একটি বড় অংশ নিয়মিত পৌঁছে যায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের হাতেও।

সূত্র জানায়, আনজুমানপাড়া সীমান্তকে ঘিরে সক্রিয় দুটি বড় গ্রুপ। প্রথম গ্রুপ আওয়ামী লীগ- বিএনপি মিলে গড়ে ওঠা বাবুল মেম্বার (জাফর মেম্বার)- রিজভী সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তারা ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর প্রভাব কমে গেলে স্থানীয় যুবদল- ছাত্রদলের একটি অংশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

দ্বিতীয় গ্রুপ শীর্ষ কারবারি ছৈয়দুল বশর ছিইছি’র নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। এই গ্রুপের মূল সহযোগীরা হলো সৈয়দ আকবরের ছেলে আবুল বশর বসু, হাছিম বলীর ছেলে শাহ কামাল, হানিফের ছেলে আবদুল আহাদ এবং করিম উল্লাহর আবু তাহের।

দু’গ্রুপের মাধ্যমেই প্রতিদিন ইয়াবার চালান মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে আসে। সশস্ত্র সদস্যরা তা নিয়ে যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে ইয়াবা ডন জামাই শফির হেফাজতে থাকে চালান, পরে পৌঁছে যায় কুতুপালংয়ের শীর্ষ কারবারি শাহজালালের কাছে। এরপর তা বণ্টিত হয় মরিচ্যা চেকপোস্ট এলাকার দুই সহোদর মিজান- সাইফুল, কালারপাড়ার মিজান, চেকপোস্ট এলাকার কামাল এবং আলোচিত মাদক সম্রাট মুবিনের কাছে। এভাবে সীমান্ত থেকে রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছে যায় চালান।

ছৈয়দুল বশরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও কয়েকজন আলোচিত কারবারি- ইরান মাঝি ও তার সহোদর রুবেল। বালুখালীর কুখ্যাত ইয়াবা ডন ছিয়ক ফরিদ, ধামনখালীর রহমতের বিলের মনির, শিয়াইল্লাপাড়ার জয়নাল। রুবেল একসময় বিপুল পরিমাণ আইসসহ ধরা পড়লেও বাকিরা এখনো আইনের ফাঁক গলে সক্রিয় রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় সব ইয়াবা গ্রুপ থেকেই মাসোহারা নেয় স্থানীয় যুবদল নেতা মনজুর। তার স্পষ্ট বক্তব্য- ‘কারবার যে-ই করুক, ভাগ আমাকে দিতেই হবে।’

মাসোহারা দেওয়ার পরও মাঝে মাঝে এক গ্রুপ অপর গ্রুপকে বিপদে ফেলতে নামধারী সাংবাদিকদের ব্যবহার করে তথ্য ফাঁস করে। এতে বিজিবি বা পুলিশ অভিযানে যায়। তবে সেগুলো অনেক সময় ‘ভুয়া অভিযান’- চালান উদ্ধার হয়, কিন্তু কারবারি আটক হয় না। এতে বাহিনীর সাফল্যের খবর প্রকাশিত হলেও রহস্যের জট থেকে যায়।

‘পরিত্যক্ত ইয়াবা উদ্ধার’ ইস্যুটি একাধিকবার আলোচিত হয়েছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

স্থানীয়দের দাবি, বাবুল মেম্বার, রিজভী বা ছৈয়দুল বশর- এই তিনজনের যেকোনো একজনকে রিমান্ডে আনলেই বিপুল ইয়াবা চালানের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে। কিন্তু প্রভাবশালী নেটওয়ার্কের কারণে এখনো তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্থানীয় কৃষক মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন রাতেই আমরা সীমান্তে গুলির শব্দ শুনি। ভোরে দেখি বিজিবি ইয়াবা উদ্ধার করেছে। কিন্তু কারও নাম আসে না। যারা আসল কারবারি, তারা তো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

আরেক কৃষক বলেন, ‘গ্রামের মানুষ আতঙ্কে থাকে। ইয়াবা ব্যবসার কারণে এলাকায় ডাকাতি, খুনখারাবি বেড়ে গেছে। প্রশাসন উদ্ধার দেখালেও মূল হোতারা ধরা পড়ে না। এতে সন্দেহ হয়, কোনো গোপন আঁতাত আছে কি না।’

মানবাধিকার সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘শুধু উদ্ধার দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। প্রতিবার দেখা যায় লাখ লাখ ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু মামলা হয় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষ মনে করে- এভাবে গডফাদাররা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।’

তার মতে, মাঠের বাহকরা ধরা পড়ে, কিন্তু যাদের পেছনে কোটি টাকার সিন্ডিকেট আছে তারা ছায়ার আড়ালেই থাকে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবও অস্বীকার করার উপায় নেই।

উখিয়ার ৬৪ বিজিবি জানায়, পালংখালীর সীমান্তবর্তী কাটাখাল এলাকায় বিশেষ অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মালিকানা নিয়ে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]