
ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে। পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং সরকারি আইন লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ পেলেও এক যুবদল নেতার নেতৃত্বে অবৈধ সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে অনিয়ম করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ পৌরসভার মিলগেইট থেকে উত্তর ভাদার্ত্তী হয়ে টেকপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটির উন্নয়ন কাজ চলছে। স্থানীয়দের দৈনন্দিন চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির সংস্কার কাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাজটি সরাসরি মূল ঠিকাদার করছেন না। যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে একজন সাব-ঠিকাদার কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। অথচ "পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬" এবং "পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস, ২০০৮" অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া মূল ঠিকাদার কোনো সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু কালীগঞ্জে এই নিয়ম লঙ্ঘনকেই "প্রচলিত প্রথা" হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই যুবদল নেতা কাজটি বাগিয়ে নিয়েছেন এবং ইচ্ছেমতো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন।
এই অনিয়মের পেছনে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতিকেও দায়ী করছেন অনেকে। আইন অনুযায়ী, কাজের মান যাচাই ও তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌর প্রকৌশলীর নিয়মিত সাইট ভিজিট এবং নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না বলে অভিযোগ। প্রকৌশলীর অনুপস্থিতি ও উদাসীনতা ঠিকাদারকে দুর্নীতি করতে আরও উৎসাহিত করছে। উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ এভাবে লুটপাট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের মতে, এই দুর্নীতির খেসারত দিতে হবে সাধারণ জনগণকেই, কারণ নিম্নমানের কাজের কারণে সড়কটি অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে জনদুর্ভোগের কারণ হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাব-কন্ট্রাক্টর ও যুবদল নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, কালীগঞ্জ পৌর প্রকৌশলী জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তিনি বলেন, "যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি, আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করব এবং সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
এলাকাবাসী এখন পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে কাজের মান নিশ্চিত করা হোক এবং এই জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর